অনলাইনে সন্তান কি নিরাপদ?

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
অনলাইনে সন্তান কি নিরাপদ?
ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় ছিল যখন শৈশব মানে ছিল খেলার মাঠে দুরন্ত বিকেল কিংবা পাঠ্য বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে কমিক বা গোয়েন্দা গল্প পড়া। সময়ের বিবর্তনে একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিশু-কিশোরদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নানা গ্যাজেট এবং ইন্টারনেটের সমন্বয়ে তৈরি ভার্চুয়াল জগৎ।

আপাতদৃষ্টিতে জিনিসটা স্বাভাবিক মনে হলেও সন্তানের অনলাইন-কার্যক্রম কোনোভাবেই হেলাফেলা করার মতো ব্যাপার নয়। বর্তমানে ‘ফেসবুক ডিপ্রেশন’ নামের নতুন একটি উপসর্গ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এর পাশাপাশি অনলাইনে স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস, অশ্লীল ছবি বা ভিডিওর কারণে নৈতিক অবক্ষয় ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না। বলাই বাহুল্য, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অনলাইন দুনিয়ার অন্ধকার দিকগুলোতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। এ অবস্থায় সন্তানের অনলাইন কার্যক্রম সম্পর্কে সকল অভিভাবকেরই সচেতন হওয়া উচিত।

ফেসবুক থেকে দূরে রাখা : সাধারণত ১৩ বছর বয়সের কমে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত নয় বলা হলেও বয়স লুকিয়ে খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। তাই সন্তান অল্প বয়সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ভার্চুয়াল জগতে সময় পার করছে কিনা নজর রাখতে হবে।

ফিল্টারিং সফটওয়্যার : বিশেষ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর রাখা যাবে। এমনকি সন্তান ঠিক কতক্ষণ অনলাইনে রয়েছে বা কী টাইপ করছে তা সম্পর্কেও জানা যাবে। ‘পিউরসাইট পিসি’র মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন সাইট বা কনটেন্ট ব্লক করে রাখা যায়।

নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন তৈরি : ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি করুন। তারপর ছেলে বা মেয়েকে এসব নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন করুন। একই সঙ্গে ঠিক কী কারণে এমন নিয়ম করা হয়েছে তা নিয়েও সন্তানের সঙ্গে খোলখুলি আলোচনা করুন।

সন্তানের অভ্যাস : সন্তানের অভ্যাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। সে কী ধরনের সিনেমা পছন্দ করে বা তার কাছের বন্ধু কারা তা খুঁজে বের করুন। এ ক্ষেত্রে সন্তানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আগে তার ফ্রেন্ডলিস্ট কখনোই গোপন থাকবে না এমন প্রতিশ্রুতি নিন।

ঘরের কেন্দ্রস্থলে কম্পিউটার : কম্পিউটারসহ অন্যান্য ডিভাইস ঘরের এক কোণে না রেখে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সবার আনাগোনা রয়েছে। এর ফলে সন্তান ইন্টারনেট কী করছে তা অজানা থাকবে না।

সন্তানের ফেসবুক পোস্ট : ছেলে বা মেয়ে ফেসবুকসহ অন্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে কী ধরনের পোস্ট শেয়ার করছে সে বিষয়ে জানুন। বিশেষ করে সন্তান যদি হয় মেয়ে তবে সে ফেসবুকে নিজের কী ধরনের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করছে। বর্তমানে মেয়েদের ছবি বা ভিডিও এডিটের মাধ্যমে হয়রানি করার উদাহরণ কম নয়।

নিজেই উদাহরণ তৈরি করুন : নিজেই যদি মিনিট দশেক পরপর ফেসবুক বা টুইটারে লগ-ইন করে সময় নষ্ট করেন তবে আপনাকে দেখে সন্তানের মধ্যেও এই বদভ্যাস দেখা দেবে। তাই আগে নিজেকে ঠিক করুন এবং সন্তানের কাছে নিজেকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলুন।

ডিভাইস-নির্ভরতা কমিয়ে দিন : সেলফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো ডিভাইসের ওপর অতিরিক্ত আসক্তি কমিয়ে দিন। এর চেয়ে সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান অথবা বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। এর ফলে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বন্ধুসুলভ এবং তার অনলাইন কার্যক্রম অজানা থাকবে না।

সন্তানকে সচেতন করুন : অনলাইন জগতের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন। অনলাইনে পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়ে আসক্ত হয়ে পড়লে তা তার ভবিষ্যৎ জীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে তা সম্পর্কে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।

প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন : ছেলে বা মেয়ে অনলাইনে কী করছে তা জানতে অভিভাবকদের পর্যাপ্ত প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে। তাই নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন। এর ভালো ও খারাপ দিকগুলো শনাক্ত করে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অনলাইনে সন্তান কি নিরাপদ?

অনলাইনে সন্তান কি নিরাপদ?
ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় ছিল যখন শৈশব মানে ছিল খেলার মাঠে দুরন্ত বিকেল কিংবা পাঠ্য বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে কমিক বা গোয়েন্দা গল্প পড়া। সময়ের বিবর্তনে একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিশু-কিশোরদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নানা গ্যাজেট এবং ইন্টারনেটের সমন্বয়ে তৈরি ভার্চুয়াল জগৎ।

আপাতদৃষ্টিতে জিনিসটা স্বাভাবিক মনে হলেও সন্তানের অনলাইন-কার্যক্রম কোনোভাবেই হেলাফেলা করার মতো ব্যাপার নয়। বর্তমানে ‘ফেসবুক ডিপ্রেশন’ নামের নতুন একটি উপসর্গ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এর পাশাপাশি অনলাইনে স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস, অশ্লীল ছবি বা ভিডিওর কারণে নৈতিক অবক্ষয় ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না। বলাই বাহুল্য, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অনলাইন দুনিয়ার অন্ধকার দিকগুলোতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। এ অবস্থায় সন্তানের অনলাইন কার্যক্রম সম্পর্কে সকল অভিভাবকেরই সচেতন হওয়া উচিত।

ফেসবুক থেকে দূরে রাখা : সাধারণত ১৩ বছর বয়সের কমে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত নয় বলা হলেও বয়স লুকিয়ে খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। তাই সন্তান অল্প বয়সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ভার্চুয়াল জগতে সময় পার করছে কিনা নজর রাখতে হবে।

ফিল্টারিং সফটওয়্যার : বিশেষ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর রাখা যাবে। এমনকি সন্তান ঠিক কতক্ষণ অনলাইনে রয়েছে বা কী টাইপ করছে তা সম্পর্কেও জানা যাবে। ‘পিউরসাইট পিসি’র মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন সাইট বা কনটেন্ট ব্লক করে রাখা যায়।

নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন তৈরি : ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি করুন। তারপর ছেলে বা মেয়েকে এসব নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন করুন। একই সঙ্গে ঠিক কী কারণে এমন নিয়ম করা হয়েছে তা নিয়েও সন্তানের সঙ্গে খোলখুলি আলোচনা করুন।

সন্তানের অভ্যাস : সন্তানের অভ্যাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। সে কী ধরনের সিনেমা পছন্দ করে বা তার কাছের বন্ধু কারা তা খুঁজে বের করুন। এ ক্ষেত্রে সন্তানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আগে তার ফ্রেন্ডলিস্ট কখনোই গোপন থাকবে না এমন প্রতিশ্রুতি নিন।

ঘরের কেন্দ্রস্থলে কম্পিউটার : কম্পিউটারসহ অন্যান্য ডিভাইস ঘরের এক কোণে না রেখে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সবার আনাগোনা রয়েছে। এর ফলে সন্তান ইন্টারনেট কী করছে তা অজানা থাকবে না।

সন্তানের ফেসবুক পোস্ট : ছেলে বা মেয়ে ফেসবুকসহ অন্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে কী ধরনের পোস্ট শেয়ার করছে সে বিষয়ে জানুন। বিশেষ করে সন্তান যদি হয় মেয়ে তবে সে ফেসবুকে নিজের কী ধরনের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করছে। বর্তমানে মেয়েদের ছবি বা ভিডিও এডিটের মাধ্যমে হয়রানি করার উদাহরণ কম নয়।

নিজেই উদাহরণ তৈরি করুন : নিজেই যদি মিনিট দশেক পরপর ফেসবুক বা টুইটারে লগ-ইন করে সময় নষ্ট করেন তবে আপনাকে দেখে সন্তানের মধ্যেও এই বদভ্যাস দেখা দেবে। তাই আগে নিজেকে ঠিক করুন এবং সন্তানের কাছে নিজেকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলুন।

ডিভাইস-নির্ভরতা কমিয়ে দিন : সেলফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো ডিভাইসের ওপর অতিরিক্ত আসক্তি কমিয়ে দিন। এর চেয়ে সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান অথবা বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। এর ফলে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বন্ধুসুলভ এবং তার অনলাইন কার্যক্রম অজানা থাকবে না।

সন্তানকে সচেতন করুন : অনলাইন জগতের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন। অনলাইনে পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়ে আসক্ত হয়ে পড়লে তা তার ভবিষ্যৎ জীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে তা সম্পর্কে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।

প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন : ছেলে বা মেয়ে অনলাইনে কী করছে তা জানতে অভিভাবকদের পর্যাপ্ত প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে। তাই নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন। এর ভালো ও খারাপ দিকগুলো শনাক্ত করে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: মনসুরাবাদ হাউজিং, ঢাকা-১২০৭ এজেড মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।