বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বাড়ি আর সেখানে পরিবার হলো সহপাঠীরা। পরিবার মানেই তো হাজারো গল্প। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না নিয়েই জন্ম নেয় গল্পগুলো। আর এমন বহু গল্পের প্রতিচ্ছবি নিয়ে লাল ইটের গাথুনিতে তৈরী দালান আর সবুজের সমারোহে সেঁজে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ঠিকানা হয়ে দন্ডায়মান গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। যেখানে হাজারো স্মৃতি রেখে যেতেই যেন চৌকাঠে পা দিয়েছিলাম।
বলা হয়ে থাকে জীবনে বিষন্নতার আবির্ভাব ঘটলে ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ। তেমনি নিয়মিত ক্লাস আর বইয়ের পাতার শত শত আইনের ধারা থেকেও সাময়িক বিরতির প্রয়োজন। তাইতো সকালের ঘুমকে বিসর্জন দিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়া, সারাদিন সব ভুলে হৈ-হুল্লোড়! বলছিলাম গবির আইন বিভাগের ২৬তম ব্যাচের চড়ুইভাতির গল্প।
মানুষ সবসময় ছোট থাকতে চায়। ছোটবেলার স্মৃতিতে মানুষ সবসময় সুখী। আর শৈশবের সেই স্মৃতি গুলোর মধ্যে চড়ুইভাতি অন্যতম। কোনো কারণ ছাড়াই সিদ্ধান্ত হতো চড়ুইভাতি খাওয়ার।
মায়ের কাছে আবদার করে আনা হতো চাল,ডাল। হাড়িতে চাপিয়ে দেয়া হতো রান্না। আর তারপর সবাই মিলে খাওয়া। সেই চড়ুইভাতির স্বাদ পৃথিবীর সকল খাবারের স্বাদকে হার মানাতো। তবে বয়সের সাথে সাথে পাল্টে গেছে ক্যাম্পাস জীবনে এসে চড়ুইভাতির গল্প।
হুটহাট করা পরিকল্পনাগুলো চমৎকার হয় তাইতো আমরাও হঠাৎ করেই চড়ুইভাতি করার ইচ্ছা পোষণ করি। সবাই রাজী, দিন তারিখও ঠিক করা হলো। দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া হলো।
চড়ুইভাতির চাঁদা তোলার কাজে লেগে পড়ে জামিল আর পিংকু। সকালে বাজার নিয়ে হাজির রিপন আর খোকন। শুরু হয় কাজের পালা। মেয়েরা পেয়াজ-রসুন নিয়ে কাটাকুটির কাজে লেগে পড়ে। ছেলেরা পানি আনা থেকে সবকিছু প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। শুরু হয় রান্না।
একদিকে হাড়িতে তৈরী হচ্ছে খাবার আর পাশেই জমে উঠে গল্প আর গানের আড্ডা। লিমন স্যার এসে যোগ দেন আড্ডায়। গল্প আর গানে মূহুর্তেই পরিবেশ হয়ে উঠে আনন্দঘন। বেশ কয়েকজন ছবি আর সেলফি তুলতেই ব্যস্ত। তাদের কাজই যেন এটা!
এরপরেই সবার উপস্থিততে শুরু হয় বালিশ নিক্ষেপ খেলা। খেলায় বিজয়ী হলেন আমাদের প্রিয় লিমন স্যার। সবার চোখেই যেন আনন্দের ছাপ। ততক্ষণে রান্না সম্পন্ন।
শুরু হয় পেট পূজা। খাওয়া শেষে সবাই মিলে ছবি তুলে স্মৃতি সংরক্ষণ করে বাড়িতে ফিরি। স্রোতের সাথে সময়ও চলে গেলো ছলাৎ ছলাৎ করে। আনন্দঘন মুহূর্তে দারুন এক সম্প্রীতির নিদর্শন রেখে এই সুন্দরতম দিনের সমাপ্তি ঘটে। ক্যাম্পাস জীবনের এই চড়ুইভাতি স্মৃতি হয়ে থেকে গেলো। বৃদ্ধ বয়সে হয়তো এই স্মৃতি গুলোকে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকা হবে।