ডিমের বাজারে এখন উড়ছে নানা কথা। চলছে কানাকানি। ৪ কোটি ডিম আমদানি করা হবে, তাতে ডিমের দাম কি কমবে? নাকি, বাজার আগের মতোই টালমাটাল থাকবে? কোন দেশ থেকে কত টাকায় আমদানি করা হবে? আর সেই ডিম কত টাকায় বিক্রি করা হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। আর পাইকাররা রয়েছে ভয়ে। আমদানি হলে দর কমার আশঙ্কায় ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছে তারা। তবে খুচরা বাজারে দাম কমেনি।
আমদানির ঘোষণায় পাইকারি বাজারে ১০০ ডিমে ২০-৩০ টাকা কমলেও খুচরায় তার প্রভাব পড়েনি। খুচরায় ডিম ৫০-৫২ টাকা দরে হালি বিক্রি হচ্ছে। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা দরে।
আগেই জানা গেছে, ভারত থেকে প্রতিটি ডিম ৬ টাকা দরে এনে ১২ টাকায় বিক্রি করা হবে। এ বিষয়টি নিয়েও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেননা গত সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে বাণিজ্য সচিব তপন কুমার ঘোষ জানিয়েছেন আমদানি করা ৬ টাকার ডিমও ১২ টাকাতেই বিক্রি হবে।
এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমের রিপোর্টে দেখলাম প্রতিটি ৬ টাকা দরে ডিম আমদানি করে নাকি ১২ টাকায় বিক্রি করা হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ৬ টাকার ডিম কেন ১২ টাকায় বিক্রি করা হবে। তা হলে কি আমদানিকারকদের দ্বিগুণ লাভের
সুযোগ করে দেওয়া হবে। তার চেয়ে বড় কথা হলো, সরকার ডিমের দাম কমানোর উদ্দেশ্যে আমদানির অনুমতি দিয়েছে। যদি আমদানির ডিমও ১২ টাকায় বিক্রি করা হয়, তা হলে ডিমের দাম কীভাবে কমবে। আমি মনে করি, আমদানি করা প্রতিটি ডিম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮-৯ টাকার বেশি হওয়া ঠিক হবে না।’
একই বাজারের ডিম ব্যবসায়ী হযরত আলী মুন্সি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিমের বাজার নিয়ে আমরা এখন ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। কখন দাম কমে যায়, নাকি আরও বেড়ে যায়। আমদানির ডিম কবে দেশে আসবে, কী দরে বিক্রি করা হবে-এ রকম নানা প্রশ্ন মনে ঘুরছে আমাদের। তবে আমরাও মনে করি, ভারত থেকে যেসব ডিম আসবে সেগুলো মূলত সাদা ডিম। সাদা ডিম সবসময়ই লাল ডিমের চেয়ে ১-২ টাকা কম দামে বিক্রি হয়। তাই আমদানিকৃত সাদা ডিম ৮-১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করা ঠিক হবে না। কিন্তু যারা ডিম আমদানি করবেন, তারা যদি কম দামে আমাদের না দেন তা হলে তো আমরা ওই দামে বিক্রি করতে পারব না।’
ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গত সোমবার ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চারটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ১ কোটি করে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আরও ডিম আমদানির অনুমতির কথা ভাবছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অবশ্য, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি আমদানি করা ডিম ভোক্তাদের কাছে ১০ টাকা দামের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং, অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেডকে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ১ কোটি করে ডিম আমদানি করবে। এর মধ্যে মীম এন্টারপ্রাইজ নির্ধারিতভাবে ভারত থেকেই ডিম আমদানির কথা জানিয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সুবিধামতো জায়গা থেকে ডিম আনবে। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও পাশের দেশ থেকে ডিম আনবে। সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে ভারতীয় ডিমই।
যে চার প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে, তার মধ্যে টাইগার ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটর সাইফুর রহমান বলেন, আমি গতবারও ডিমের দাম বাড়ায় আমদানি নিয়ে সোচ্চার ছিলাম। ডিমের দাম বাড়ায় ভোক্তাদের ওপর চাপ পড়ছে। আমরা ডিম আমদানি করব, কিন্তু আমরা চাই না খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আমার কথা ব্যবসায়ীরাও বাঁচুক এবং ভোক্তারাও বাঁচুক। এটা একটা সিন্ডিকেট যেন না থাকে। আমরা ভারত থেকে যতদ্রুত সম্ভব ডিম আনার চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করব প্রতিটি ডিম ১০ টাকায় ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে।’