গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণের হিসাব মিলছে না- এ নিয়ে যখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউসে তোলপাড়, তার মধ্যেই জানা যায় গোডাউনের ভেতরে চুরি হয়েছে। গুদামের ভেতরে আলমারির দরজা লক ভাঙা, এবং এসির বাতাস বের হওয়ায় জায়গায় কিছু অংশ কাটা রয়েছে।
কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে এই স্বর্ণ গায়েবে তিনজন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। কাস্টমসের দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক সিপাহিকে স্বর্ণ চুরির প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম শাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার। স্বর্ণের গরমিল ধামাচাপা দিতেই তাঁরা ‘সিঁধ কাটার’ নাটক সাজিয়েছেন।
তিনজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হলেও গুদাম থেকে স্বর্ণ গায়েব সিন্ডিকেটের শিকড় আরও অনেক গভীরে বলে তথ্য পাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মামলাটি থানা পুলিশ থেকে ডিবিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, সন্দেহভাজন দুই রাজস্ব কর্মকর্তার মধ্যে শাহেদকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় শাখা এয়ারফ্রেইটে বদলি করা হয়। তবে স্বর্ণ গায়েবের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তড়িঘড়ি করে সেই বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়। আর স্বর্ণ চুরিতে শাহেদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় শীর্ষ কর্মকর্তার যোগসাজশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত শুরুর পর থেকে মূল হোতাদের আড়াল করতে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ নানাভাবে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। গুদামে থাকা মালপত্রের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাওয়া হলেও তা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেয়নি তারা। আর চুরি যাওয়া ৫৫.৫১ কেজি স্বর্ণের মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা স্বর্ণ ছিল ৪৭.৪৯ কেজি। এই স্বর্ণের কেউ মালিকানা দাবি করতে আসবে না জেনেই পরিকল্পিতভাবে স্বর্ণ গায়েব করা হয়েছে বলে মনে করছেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গুদামের ভেতর এসির ভেন্টিলেটরের পাশের অংশ ভাঙা দেখিয়ে ঘটনাটি চুরি বলে ঢাকা কাস্টম হাউস থেকে দাবি করা হলেও তার স্বপক্ষে যুক্তি দেখাতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলের পাশের সিসি ক্যামেরাটি কারা নিয়ন্ত্রণ করছে, তা স্বীকার করছে না কোনো সংস্থা।
দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক সিপাহি জড়িত থাকা প্রসঙ্গে উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, শহীদুল ও শাহেদ আমাদের প্রধান টার্গেট। ঘটনার দিন, ঘটনার আগে ও পরে তাদের বিভিন্ন সময় এয়ারপোর্টের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। যেখানে তাদের থাকার কথা নয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথার মধ্যে অনেক অসংগতি লক্ষ করা যায়। এসব তথ্য প্রমাণে এই দুই কর্মকর্তা ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদারকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
গুদাম থেকে স্বর্ণগুলো গায়েব করার পর কোথায় নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গায়েব করা স্বর্ণ কোথায় রাখা হয়েছে, বা হাতবদলের পর কী করা হয়েছে, তাও খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।