বড় চার চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

ন্যাশনাল ডেস্ক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
বড় চার চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

‘বড় চার চ্যালেঞ্জর মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো- জনগণকে মানসম্মত রাষ্ট্রীয় সেবা দিতে রাজস্বের পরিমাণ আরও বাড়ানো, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মঙ্গলবার বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ ও রাষ্ট্রের কার্যকারিতা বিষয়ে আয়োজিত এক পাবলিক লেকচারে এসব কথা বলেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট দপ্তরের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রধান অর্থনীতিবিদ আদনান খান।

রাজধানীর একটি হোটেলে লেকচারের আয়োজন করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার। এ ছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন উপস্থিত ছিলেন।

আদনান খান আরও বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি কিছুটা কমেছে। যেমন দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি কমেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ কমেছে। অন্যদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় মূল্যস্ফীতি রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এগুলোর সবই স্বল্পমেয়াদি সমস্যা। তবে সামনে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে জনগণ ভালো মানের নাগরিক সুবিধা পেতে চাইবে। আর এ সুবিধা দিতে হলে সরকারের অনেক বেশি রাজস্ব আয়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপির হার অনেক কম। এটি অন্যতম প্রধান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কৃষি খাতের জিডিপি এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে অভিবাসী হতে পারেন। দেশের রপ্তানি আয় মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। রপ্তানি তেমনভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হচ্ছে না। একই সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে না।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, কাঙ্ক্ষিত কর আদায়ের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা আমাদের কর কর্মকর্তাদের মধ্যে নেই। তারা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান (রেইড) চালান। এটা উদ্যোক্তাদের জন্য এক ধরনের হয়রানি। এতে করদাতারা আস্থা হারিয়ে স্বেচ্ছায় কর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কর আদায় না বাড়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণের চেয়ে প্রশাসনিক কারণই বেশি দায়ী। করহার এমন পর্যায়ে হওয়া উচিত নয়, যাতে করদাতারা সেই কর দিতে নিরুৎসাহিত হন। পাশাপাশি কর প্রদানের বিষয়ে করদাতাদের শিক্ষিত করারও পরামর্শ দেন তিনি।

মসিউর রহমান আরও বলেন, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার আওতা বৃদ্ধিকে আমরা সফলতা হিসাবে দেখাই। তবে আমাদের মানসম্মত শিক্ষায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করাও সম্ভব হচ্ছে না। এটি আবার বিদেশি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক গতিকে কমিয়ে দিতে পারে।’

ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, ‘দেশে সুশাসনের একটা ঘাটতি আছে, এটা সত্য। তবে বাংলাদেশ আসলেই উন্নয়ন করছে। যুগোপযোগী ব্যবসা উদ্যোগ, শ্রমশক্তি ও শ্রমে নারীর অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধির কারণেই এ উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।’

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বড় চার চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

বড় চার চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

‘বড় চার চ্যালেঞ্জর মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো- জনগণকে মানসম্মত রাষ্ট্রীয় সেবা দিতে রাজস্বের পরিমাণ আরও বাড়ানো, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মঙ্গলবার বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ ও রাষ্ট্রের কার্যকারিতা বিষয়ে আয়োজিত এক পাবলিক লেকচারে এসব কথা বলেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট দপ্তরের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রধান অর্থনীতিবিদ আদনান খান।

রাজধানীর একটি হোটেলে লেকচারের আয়োজন করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার। এ ছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন উপস্থিত ছিলেন।

আদনান খান আরও বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি কিছুটা কমেছে। যেমন দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি কমেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ কমেছে। অন্যদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় মূল্যস্ফীতি রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এগুলোর সবই স্বল্পমেয়াদি সমস্যা। তবে সামনে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে জনগণ ভালো মানের নাগরিক সুবিধা পেতে চাইবে। আর এ সুবিধা দিতে হলে সরকারের অনেক বেশি রাজস্ব আয়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপির হার অনেক কম। এটি অন্যতম প্রধান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কৃষি খাতের জিডিপি এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে অভিবাসী হতে পারেন। দেশের রপ্তানি আয় মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। রপ্তানি তেমনভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হচ্ছে না। একই সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে না।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, কাঙ্ক্ষিত কর আদায়ের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা আমাদের কর কর্মকর্তাদের মধ্যে নেই। তারা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান (রেইড) চালান। এটা উদ্যোক্তাদের জন্য এক ধরনের হয়রানি। এতে করদাতারা আস্থা হারিয়ে স্বেচ্ছায় কর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কর আদায় না বাড়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণের চেয়ে প্রশাসনিক কারণই বেশি দায়ী। করহার এমন পর্যায়ে হওয়া উচিত নয়, যাতে করদাতারা সেই কর দিতে নিরুৎসাহিত হন। পাশাপাশি কর প্রদানের বিষয়ে করদাতাদের শিক্ষিত করারও পরামর্শ দেন তিনি।

মসিউর রহমান আরও বলেন, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার আওতা বৃদ্ধিকে আমরা সফলতা হিসাবে দেখাই। তবে আমাদের মানসম্মত শিক্ষায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করাও সম্ভব হচ্ছে না। এটি আবার বিদেশি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক গতিকে কমিয়ে দিতে পারে।’

ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, ‘দেশে সুশাসনের একটা ঘাটতি আছে, এটা সত্য। তবে বাংলাদেশ আসলেই উন্নয়ন করছে। যুগোপযোগী ব্যবসা উদ্যোগ, শ্রমশক্তি ও শ্রমে নারীর অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধির কারণেই এ উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।’

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: ১৮/৩, ব্লক-এফ, রিং রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ এজেড মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স নং : TRAD/DNCC/154868/2022