বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিলেন অনামিকা আক্তার ওরফে আপন। কিন্তু বিয়ের পর বাবা মায়ের সেই আদরের আপন স্বামী,শ্বশুর শাশুড়ীর কাছে আপন হতে পারেন নি। তাইতো যৌতুকের বলি হতে হয়েছে তাকে। এমনই অভিযোগ পরিবারের। আপন বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের নিলাক্ষিয়া উত্তর পাড়া গ্রামের রাকিবুর রহমানের মেয়ে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকালে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ারচর তিনানীপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অনামিকা আক্তারের শাশুড়ী কে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ারচর এলাকার তিনানীপাড়া গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে মামুনের সাথে বকশীগঞ্জের নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়া গ্রামের রাকিবুর রহমানের মেয়ে অনামিকা আক্তার আপনের( ২০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য নানা ভাবে নির্যাতন করে আসছিলো স্বামীসহ শশুর বাড়ির লোকজন। এই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য লেগেই থাকতো।
একাধিকবার গ্রাম্য শালিস বৈঠকও হয়৷ শালিস বৈঠক হলেও অনামিকা আক্তার আপনের উপর নির্যাতনের মাত্রা কমেনি বরং দিনদিন তা বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় আপন। শিশুটির বয়স দেড় বছর্। কিন্তু অনামিকার উপর যৌতুক লোভী পাষন্ড স্বামী মামুন,শশুর এরশাদ আলী,শাশুড়ী রওশন আরা বেগমের নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। গত ৩ আগস্ট অনামিকা আক্তার আপনের উপর ব্যাপক অমানুষিক নির্যাতন চালায় তারা। নির্যাতনের এক পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে অনামিকা। এ সময় স্বামী মামুন তার শশুরকে ফোন করে জানায় অনামিকা বিষ খেয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই মামুন আবার ফোন করে তার শশুরকে জানায় আপনার মেয়ে মারা গেছে,তাকে নিয়ে যান।
অনামিকার ভগ্নিপতি শেখ ইয়াম লিখা বলেন,যৌতুকের বলি হয়েছেন অনামিকা। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ অনামিকাকে গোপনে প্রথমে শেরপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়৷ হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যায় অনামিকা। তখন তার মুখে কীটনাশক ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মারা যাওয়ার পর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় মামুন। পরে মামুনের বাড়ি থেকেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহত অনামিকা ওরফে আপনের মা বাদী হয়ে শ্রীবরদী থানায় অভিযোগ দেন। মঙ্গলবার পুলিশ নিহত আপনের শাশুড়ী রওশন আরা ওরফে কুসুমা বেগমকে গ্রেফতার করেছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে অনামিকা আক্তার আপনের বাবা রাকিবুর রহমান বলেন, যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তারা হত্যা করেছে। পরে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজায় তারা। সকল আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার এবং আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম খান সিদ্দিকী জানান, নিহত অনামিকার মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যহত আছে।