বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে দামি ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল দেয়ার পর স্বয়ং প্লে বলেছিলেন, এম বাপ্পের মধ্যে তিনি নিজের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, কারণ এমবাপ্পেও প্লে মতই অল্প বয়সেই দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপেও ফ্রান্সের মূল ভরসা এমবাপ্পে, আর আজকে এই এমবাপ্পে কে গড়ে তোলার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তার বাবার! আজকে আমরা জানবো এমবাপ্পে এর বাবা কিভাবে তাকে বিশ্বের সেরা ফুটবলার বানিয়ে তুললেন।
এমবাপ্পে যে বছর জন্ম নিলেন সে বছরই ফ্রান্স প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল, ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসের উত্তর-পূর্ব এলাকা পন্ডিতে জন্ম নেন এমবাপ্পে, প্যারিসের এই এলাকাটি তেমন উন্নত নয়। মূলত আফ্রিকা থেকে উঠে আসা অধিবাসী রাই এখানকার বাসিন্দা, দারিদ্রতা, জাতিগত দণ্ড, অনুন্নত জীবনের ছাপ সর্বোত্ত।
২০০৬ সালেও এখানে জাতি গত দ্বন্দ্বে দাঙ্গা হয় ,এমবাপ্পেও এসবে ফিরে যেতে পারতেন কিন্তু যে ব্যক্তিটি কিলিয়ান এমবাপ্পে কে এসবে ভিড়তে দেননি তিনি ছিলেন তার বাবা উইলফ্রিদ এমবাপ্পে, তিনি নিজেও এক সময় ফুটবলার ছিলেন, বড় কিছু হয়তো করতে পারেননি ফুটবল নিয়ে ভাগ্য অন্বেষণে ৯০ দশকেই চলে আসেন ফ্রান্সে, সেখানেই একটা স্থানীয় ক্লাবে খেলতে শুরু করেন উইলফ্রিদ ক্লাবের নাম এএসবিডি।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে স্থানীয় এলাকায় তিনি শিশুদের নিয়ে কাজ করতেন, চেষ্টা করতেন তাদেরকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে, যাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে পেশাদার ফুটবলার হন। তার ভিতরে এই গুণ দেখে তাকে *এএসব্ডি* এর কোচ করে নিয়ে আসা হয়, এমবাপ্পে যখন জন্ম নেন তখন তিনি দলটির কোচ।
মা হ্যান্ড বোল্ট খেলোয়াড় হলেও উইলফ্রিদ সব সময় চেয়েছেন তার ছেলেও ফুটবল খেলুক, এমবাপ্পেও যেন ফুটবল এর প্রতি ভালোবাসা নিয়েই জন্মেছিলেন, মাত্র দুই বছর বয়স থেকেই এমবাপ্পে কে ক্লাবে নিয়ে আসছেন তিনি, বয়স কম হলেও সে অন্যান্য বেশি বয়সীদের সাথে মাঠে বল নিয়ে দৌড়ায় তো, টিমের সদস্যরা যখন আলোচনা করতো সেসব সে চুপ করে মন দিয়ে শুনতো, একটু যখন বড় হল তখন উইলফ্রিদ মন দিলেন এমবাপ্পে কে গড়ে তোলার।
তার ড্রিবলিংক ছিল অসাধারণ আর অন্যদের থেকেও তিনি খুব দ্রুতগতিতে দৌড়াতে পারতেন, এমবাপ্পে সব সময় তার রুমেও খেলতে চাইতেন, সোফা এমনকি টেবিলে ও, সারাদিন শুধু ফুটবল নিয়েই ভাবতো আর তাতে উৎসাহী দিতেন তার বাবা, ফুটবলের খুঁটিনাটি তার বাবার কাছে শিখেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
এমবাপ্পে এএস বন্ডিতেই তার ক্যারিয়ার শুরু করেন, অন্যরা যখন কোন ক্লাবে চুক্তি পেলেই বদলি হয়ে যেত বা চলে যেত, তখনো এমবাপ্পে মাঠে কঠোর অনুশীলন করত, কারণ তার বাবা শিখিয়েছিলেন ছোটখাটো কিছু নয় তাকে হতে হবে বিশ্বসেরা ফুটবলার, আর সেজন্য মাঠে পরিশ্রম করার কোন বিকল্প নেই, মাঠের বাইরের বিষয় দেখার জন্য তার বাবা আছেন।
কৈশোরে পা দিতেই তাকে দলে ফিরানোর জন্য রিয়াল মাদ্রিদ, CHELSEA, MANCHESTER CITY, LIVERPOOL, এবং FC BAYERN এর মত ক্লাবগুলো প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তার বাবা এসব লবন উপেক্ষা করে তাকে ফ্রেন্ডস ক্লাব মুনাকো তে নিয়ে যান। সারা বিশ্বে বিখ্যাত না হলেও প্রতিভা লালন-পালনে তাদের কোন জুড়ি হয় না, থ্রিঅডি এই ক্লাব থেকেই বিশ্বসেরা হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেন।
তার বাবার এই বিচক্ষণশীল সিদ্ধান্তের কারণে এম বাপ্পে ফুটবলার হিসাবে আরো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন, মোনাকর হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন ২০১৫ সালে ২-রা ডিসেম্বর। বদলি খেলোয়ার হিসেবে তার মাঠে নামানো হয় খেলার শেষ দিকে, মনোগোতে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে রেকর্ড করে ফেলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, এরপর দারুন দারুন পারফরমেন্সও দেখাতে শুরু করেন তিনি, ফলে ২০১৭ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে যায় এমবাপ্পের।
অভিষেকের পরেই হয়ে উঠেন ফ্রান্স দলের প্রাণ, মোনাকোতে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখে এমবাপ্পের স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ তাকে দলে টানার চেষ্টা করে, কিন্তু সে সময় যদি এমবাপে রিয়াল মাদ্রিদে আসতেন, তাহলে রোনালদো, প্লে, এর মতো খেলোয়ার থাকায় এমবাপ্পে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতেন না। আর তাই তিনি মোনাকো ছেড়ে আর তাই তিনি মোনাকো ছেড়ে পিএসসিতে লোনে যোগ দেন, পরের মৌসুমে তাকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেন পিএসসি।
এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদের যোগ না দিয়ে পিএসসিতে যাওয়ার পিছনেও ছিল তার বাবার অবদান, এই কারণে কিলিয়ান এমবাপ্পে কোন পেশাদার এজেন্ট রাখেননি তার জন্য, এখনো তার বাবা মাঠের বাইরের বিষয়গুলো দেখেন। একজন মানুষের গড়ে ওঠার পিছনে তার পরিবারের ভূমিকায় মুখ্য, কিলিয়ান এমবাপ্পের এরকম দুর্দান্ত ফুটবলার গড়ে ওঠার পিছনে তার বাবার বিচক্ষণতার কথা সব সময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।