সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম সব পর্যায়ে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বেড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা হয়।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি আজ দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে বলে জানা গেছে। তবে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ছে না। কারণ গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে হলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সঠিক কারণ উল্লেখ করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে হয়। এখনো এ এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়নি কোনো বিতিরণ কোম্পানি। তবে বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, পাইকারি দাম বাড়লে অবশ্যই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে হবে। কারণ তারা বেশি দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কিনে তা গ্রাহক পর্যায়ে কম দামে বিক্রি করতে পারবে না। এতে দেউলিয়া হয়ে যাবে কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে এবার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমাতে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আইএমএফ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের যেসব শর্ত দিয়েছে, এর মধ্যে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমানো অন্যতম। আইএমএফ প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ঢাকা সফর করে বিদ্যুৎ জ্বালানি বিভাগ, বিডিবি, বিপিসি, পেট্রোবাংলা এবং বিইআরসির সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকগুলোতে আইএমএফ মূলত ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা করেছে।
এক মাস আগে পাইকারি পর্যায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও সেখান থেকে সরে আসে বিইআরসি। এ সম্পর্কে সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, গত মাসে পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল। এর মধ্যে তথ্যগত ঘাটতি ছিল একটি বড় বিষয়। এছাড়া পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি পিডিবি। এজন্য তাদের আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল।
জানা যায়, পাইকারি দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলোকেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যদিও ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেছেন, ‘কি পরিমাণ দাম বাড়াতে হবে সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা এখনো আমরা তৈরি করিনি। দেখি কী পরিমাণ দাম বাড়ে। সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’ পিডিবি ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব জমা দেয়। এরপর ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। ১৩ অক্টোবর দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কমিশন। তবে কমিশন প্রস্তাবটি রিভিউ করে পরে ফের জমা দিতে পারবে বলে পিডিবিকে জানায়। জানা গেছে, ১৪ নভেম্বর রিভিউ আপিল করে পিডিবি। এক সপ্তাহের যাচাই-বাছাই শেষে আজ নতুন দাম ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিইআরসি।
বিইআরসি এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)-এর বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে ১৩ অক্টোবর বিইআরসিকে জানায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সোমবার (আজ) দুপুর ১২টায় ভার্চুয়ালি তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
জানতে চাইলে কমিশনের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘গতবার পিডিবির যেসব তথ্যে ঘাটতি ছিল, তারা তা পূরণ করে নতুন করে রিভিউ আপিল করেছে। এটি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সোমবার (আজ) আমরা বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা করব।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ মে পিডিবি গণশুনানিতে পাইকারি বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ভর্তুকি না দিলে ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে। আর ভর্তুকি দিলে বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে জানায়। বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করেছিল।
যেভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা যায়:
-টিউব লাইটে ভালোমানের ইলেকট্রনিক্স ব্যালেস্ট ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে
-ফ্যানের ইলেকট্রনিক্স রেগুলেটর হলে বিদ্যুৎ বিলের খরচ বেঁচে যাবে
-বিভিন্ন পয়েন্টে অযথা চার্জার লাগিয়ে রাখলেও কিছু বিদ্যুৎ খরচ হয়; প্রয়োজন ব্যতীত ওভেন, ফ্যান, পিসি ইত্যাদি বন্ধ করে রাখুন
-বিদ্যুৎ সংযোগ খারাপ থাকলে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।