টানা দরপতন চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। অন্যদিকে দাম পড়তির মুখেও বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। কেউ আরও দর হারানোর আশঙ্কায় দ্রুত প্যানিক সেল করছেন। কারও কারও শেয়ার আবার মার্জিন ঋণের বাধ্যবাধকতায় ফোর্সড সেলের মুখেও পড়ছে। এর পরও অনেক ক্ষেত্রেই কেনার মতো ক্রেতা মিলছে না। ক্রেতাশূন্য বাজারে এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও হু-হু করে কমছে। পতনের ধাক্কায় সিংহভাগ পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
ফলে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ । নগদ অর্থ বিনিয়োগ করে কেউ পথে বসছেন, বিশেষ করে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা আম-ছালা উভয়ই হারাচ্ছেন। কেউ আবার দাম বাড়বে আশায় দীর্ঘকাল অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।বিনিয়োগকারীদের অভিমত এটা ২০১০ সালের পরিস্থিতিকে হার মানিয়েছেন। দরপতন ঠেকাতে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
কয়েকদিন পরই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। পুঁজিবাজারের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর জন্য এবারের ঈদ মাটি হয়ে যাবে। কারণ বাজারে যে হারে দরপতন হয়েছে, তাতে অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মতো হারিয়ে ফেলেছেন। । মুনাফা দূরের কথা, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে মূল পুঁজি উত্তোলন করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিনিয়োগকারীরা এখন চোখে সরিষার ফুল দেখছেন। সবারই দিশেহারা অবস্থা। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায়ের দেখা মিলছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই মাসের বেশি সময় যাবত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গেইন ট্যাক্স আরোপ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর সুবিধা কর্তনের বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছিল। এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজাওে চলছে টানা দরপতন। এই সময়ে ডিএসইর সূচক গায়েব হয়ে গেছে ২ হাজারের বেশি। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি যেখানে ডিএসইর সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট। ১৭ মাস ১০ দিন পর গতকাল ১০ জুন ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে। এই সময়ে ডিএসইর সূচক কমেছে পুরো ২ হাজার পয়েন্ট। আর ক্যাপিট্যাল গেইন ট্যাক্সকে কেন্দ্র করে সূচক খোয়া গেছে ৭৫০ পয়েন্টের কাছাকাছি।
বাজার আজও ছিল লাগামহীন। তবে আগের দুই দিনের চেয়ে তান্ডব কমেছে। আগামী কাল থেকে বাজারঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮০৩ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫১ টির, দর কমেছে ৩০৮ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। ডিএসইতে ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে।
সিএসইতে ২১১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৩ টির এবং ২৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।