আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশের মতো মস্তিষ্কেরও প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন এবং মনোযোগ। মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ ও সুস্থ রাখতে দৈনন্দিন রুটিনে কিছু সাধারণ অভ্যাস যোগ করতে পারেন। জেনে নিন মস্তিষ্ক ভালো রাখার জন্য কোন কোন অভ্যাস আয়ত্ত করবেন।
১। নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করুন। নতুন দক্ষতা শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখা তার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে এই নয় যে আমাদের ডিগ্রি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা জটিল বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় চিন্তাভাবনা করতে হবে। একটি নতুন বই পড়া, একটি নতুন ভাষা শেখা বা একটি নতুন শখ বাছাই করার মতো সাধারণ কাজগুলোও আমাদের মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, ক্রমাগত শেখার ফলে মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্ক ভালো রাখে ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।
২। সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এটি মস্তিষ্ককে সক্রিয় এবং সতর্ক রাখতে সাহায্য করে। দৃষ্টি, শব্দ, স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধ জড়িত এমন কার্যকলাপগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীপিত করতে পারে। যেমন একটি নতুন রেসিপি রান্না করা একাধিক ইন্দ্রিয়কে নিযুক্ত করতে পারে, যা স্নায়ু সংযোগকে শক্তিশালী করে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, এই অভ্যাস দীর্ঘসময় স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৩। মেডিটেশন কেবল আপনার শরীর ও মন শিথিল করবে না, পাশাপাশি এটি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলে ইতিবাচকভাবে। নিয়মিত মেডিটেশন শেখার ক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেডিটেশন মনোযোগ উন্নত করতে পারে, চাপ কমাতে পারে এবং এমনকি বয়স-সম্পর্কিতসমস্যাও কমিয়ে দিতে পারে।
৪। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখেত চাইলে চিনি খাওয়া কমিয়ে দিন। অতিরিক্ত চিনি খেলে আলঝাইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। নিউট্রিশনাল নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত শর্করা সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে।
৫। অ্যারোবিক ব্যায়াম শুধু আমাদের শরীরের জন্যই ভালো নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্যও চমৎকার। হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানোর মতো কাজগুলো মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, নতুন নিউরনের বৃদ্ধিকে উত্সাহিত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নতি করে। নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে, উদ্বেগ কমাতে পারে এবং বয়স-সম্পর্কিত মস্তিষ্কের ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
৬। মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখার একটি দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে গণিত অনুশীলন। এটি আমাদের মস্তিষ্ককে দ্রুত চিন্তা করার জন্য চ্যালেঞ্জ করে এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত করে। তাই ক্যালকুলেটর ব্যবহার না করে মোট খরচ নিজেই গণনা করার চেষ্টা করুন।
৭। মস্তিষ্ককে নির্দিষ্ট সময় বিশ্রাম দেওয়াও জরুরি। বিশ্রাম আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে কাজে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয় ও সৃজনশীলতা এবং উত্পাদনশীলতা বাড়ে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, নিয়মিত ছোট ছোট বিরতি মানসিক ক্লান্তি কমাতে পারে। এজন্য নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমের পাশাপাশি কাজের মধ্যেও ছোট ছোট বিরতি নিন।