চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় ৯ জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট (গ্রেফতার) দেখিয়েছেন আদালত। সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬ কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো আসামিরা হচ্ছেন- রুমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মুন মেথর, রাজীব ভট্টাচার্য ও দুর্লভ দাস। এদিকে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেফতার আট আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন অপর একটি আদালত।
সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আবু বক্কর সিদ্দিক তাদের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের এক অতিরিক্ত পিপি নেজাম উদ্দিন। ঘণ্টাব্যাপী তাকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগপত্র আদায় করেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। এ ঘটনায় মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) মফিজুল হক ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
আদালত সূত্র জানায়, সোমবার সকালে দুই মামলার ১৭ আসামিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত ৯ জনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এরপর পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেফতারকৃত আট আসামিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে হাজির করা হয়। পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম আদালতের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় ৯ জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর একটি আদালতে পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেফতার আট আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
তোপের মুখে মহানগর পিপি ও এপিপি
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডিশনাল পিপি নেজাম উদ্দিন। সোমবার দুপুর ২টার দিকে ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ঘণ্টাব্যাপী তাকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগপত্র আদায় করেন। এ ঘটনায় মহানগর পিপিরও পদত্যাগ দাবি করেছেন আইনজীবীরা। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মহানগর পিপির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা জানান, সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার মো. নুরু এবং মো. দেলোয়ার হোসেন নামে দুই আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন সানজিদা গফুর নামে এক আইনজীবী। এতে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পিপি নেজাম উদ্দিনের ওকালতনামা ব্যবহার করা হয়।
আইনজীবী সানজিদা গফুর ও নেজামউদ্দিন দুজনই মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়ার জুনিয়র। চেম্বারও একই। খবর পেয়ে মহানগর পিপির কার্যালয়ে জড়ো হন সাধারণ আইনজীবীরা। পিপি ও অ্যাডিশনাল পিপির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পিপির কাছ থেকে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।
একইভাবে যেসব সরকারি কৌঁসুলি আলিফ হত্যা মামলায় ওকালতনামা দিয়েছেন তাদের প্রত্যাহার করে নিতে ৫০ জন আইনজীবী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট সাজিদ আবদুল্লাহ সাইফ।
সাদ্দাম হোসাইন নামে একজন আইনজীবী বলেন, মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া সাইফুল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামিদের জামিনের জন্য তার জুনিয়রকে (অ্যাডিশনাল পিপি) দিয়ে আবেদন করিয়েছেন। এটি তিনি আইনগতভাবে পারেন না। একজন সরকারি আইন কর্মকর্তা হয়েও আসামিদের জামিন প্রার্থনা করে তিনি পদের অমর্যাদা করেছেন।
মোহাম্মদ শরীফ নামে অপর এক আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে এখনো ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে বসে আছেন। তারাই সহকর্মী সাইফুলের ঘাতকদের পক্ষে ওকালতনামা দিচ্ছেন। আইন লঙ্ঘন করছেন। তাদের পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। নাহলে আন্দোলন চলবে।