ইউক্রেনের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। রুশ প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম নিশ্চিত করেছে, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (গ্রিনিচ মান সময় ৫টা) থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটলো। ব্রিটিশ সংবাদমাদ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ রাশিয়াকে ‘নিজেদের রক্ত দিয়ে অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ দেবে না’। এদিকে, পোল্যান্ডের সরকার একে ‘মস্কোর বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছে।
ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইইউ এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত এবং অধিকাংশ দেশ এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে। তবে ইইউর বাইরে থাকা মলদোভা ইতোমধ্যে গ্যাস সংকটে ভুগছে।
রাশিয়া এখনও তুরস্ক, হাঙ্গেরি ও সার্বিয়ায় কৃষ্ণ সাগরের তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে।
১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেন হয়ে রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল। যদিও তাৎক্ষণিক প্রভাব তেমন না পড়লেও এই পদক্ষেপ ইউরোপজুড়ে কৌশলগত ও প্রতীকী দিক থেকে বিশাল গুরুত্ব বহন করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের পর থেকে রুশ গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে। ২০২৩ সালে ইইউর গ্যাস আমদানির ১০ শতাংশেরও কম ছিল রাশিয়া থেকে, যেখানে ২০২১ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশ।
ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় কিছু দেশ এখনও রুশ গ্যাসের ওপর ব্যাপক নির্ভরশীল। স্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়া এই সংকটে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেছেন, এই পদক্ষেপ ইইউর জন্য ‘চরম পরিণতি’ বয়ে আনবে।
অন্যদিকে, মলদোভায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু রাশিয়ার এ পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও নরওয়ের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির ওপর ইইউ নির্ভর করছে। পোল্যান্ড জানিয়েছে, তারা ক্রোয়েশিয়া, জার্মানি ও নিজস্ব সরবরাহ নেটওয়ার্ক থেকে বিকল্প রুট তৈরি করেছে।