আদিকাল থেকেই ওষুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে আদা। শুধু ওষুধ হিসেবেই আদা ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বিশেষ করে শীতকালে আদা চা দারুণ উপকারী। কারণ আদা চা আপনার শরীরকে সচেতজ রাখে এবং শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ক্রমাগত কাশি বা সর্দি যথেষ্ট অস্বস্তিকর অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটি। এ সমস্যা দূর করতে আদার তৈরি চা অত্যন্ত কার্যকর। এটি শ্বাসতন্ত্রকে শিথিল করতে এবং ফুসফুসের অতিরিক্ত শ্লেষ্মা অপসারণ করতে সাহায্য করে।
এটি হজম করতে সহায়তা করে, বমি বমি ভাব দূর করে এবং সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে আদা। আপনি যদি বমি বমি ভাব অনুভব করেন, তাহলে এক টুকরো আদা খান। এটি হবে আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত খাবার। এ ছাড়া আদা পেটের পেশি প্রশমিত করতে সাহায্য করে। আর পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ কমাতেও আদার জুড়ি মেলা ভার। আর সে কারণে আদা চা হতে পারে বমি বমি ভাব এবং বমির মতো উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়।
এ ছাড়া আপনি যদি ভ্রমণে থাকেন কিংবা চা বানানোর সুযোগ না থাকে, সে ক্ষেত্রেও এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে দারুণ উপকার পাবেন আপনি। আর আদা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। আর ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আদা।
২০১৯ সালে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদার পরিপূরক আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এমনকি কোমর-নিতম্বের অনুপাত ও অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তির নিতম্বের অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে থাকে আদা।
এরপর আদা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা থাকে। এ ব্যথা কমাতে আদা বিকল্প মহৌষধ। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা ব্যথা ও অক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে। আদা হজম ক্ষমতার উন্নতি করে। আমাদের অস্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে। আর এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো— আদা। আদায় থাকে জিঞ্জেরল নামক একটি উপাদান, যা হজম প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে সহায়তা করে। যারা প্রায়ই বদহজম, পেট ফাঁপা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের জন্য আদা দুর্দান্ত।
আর আদা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে আদা। ২৬ ট্রায়ালের একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন— আদা সেবন উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমায়।
এদিকে আদা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। জিঞ্জেরল ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগগুলোর কারণে আদার ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। কিছু প্রমাণ আছে, বিশ্বস্ত উৎস যে এই যৌগগুলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোলোরেক্টাল ক্যানসারের উচ্চঝুঁকি আছে এমন ২০ জন মানুষ ২৮ দিন টানা ২ গ্রাম করে আদা খান। সেখানে অংশগ্রহণকারীর অন্ত্রের আস্তরণে প্রত্যাশিত পরিমাণের তুলনায় কম ক্যানসারের জীবাণু পাওয়া গেছে।