ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর দিয়ে গত ১৮ দিন যাবত ভারতীয় কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দর শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এদিকে, ভারতীয় কয়লার বেশি দামে ক্ষুব্ধ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, দাম কিছুটা কমানো হলে বন্দর দুটিতে সারা বছর আমদানি কার্যক্রম চলমান থাকতো। অন্যথায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলবে বন্দরের কার্যক্রম।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিলে ভারত থেকে মাত্র ৯৬৪ টন কয়লা আমদানি হয়। এরপর আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এরপর ৪ ডিসেম্বর দুই স্থলবন্দর দিয়ে ৮ ট্রাকে ৯৬ টন কয়লা বাংলাদেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ ট্রাক কয়লা বাংলাদেশে আসে। এসব ট্রাকে ১০৮০ টন কয়লা ছিল। এরপর বড়দিন ও নতুন বছরে কয়েকদিন ছুটির কথা বলে কয়লা রফতানি বন্ধ রাখে ভারতীয়রা।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে কড়ইতলী-গোবরাকুড়া আমদানি-রফতানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার অপু জানান, ভারত থেকে প্রতিটন কয়লা কেনাসহ সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা। আমরা ৫০০ টাকা মুনাফা করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। ক্রেতা ধরে রাখাসহ বন্দর দুটির কার্যক্রম সচল রাখতে আমদানিকারকরা লাভ কম করছি। তবু ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে বড়দিন ও নতুন বছর শুরু হওয়ায় কয়েকদিন রফতানি বন্ধ রাখার কথা বলে এখন পর্যন্ত কয়লা রফতানি বন্ধ রেখেছে ভারতীয়রা। এজন্য বন্দরের কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ইটভাটায় প্রচুর কয়লার প্রয়োজন হচ্ছে। মালিকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়লা নিচ্ছেন। এ সময় বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে মালিক-শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমরা রফতানিকারকদের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই আমদানি-রফতানি আবারও শুরু হবে।’
ভারতীয় কয়লার দাম কমানো দরকার উল্লেখ করে আমদানি-রফতানি গ্রুপের এই নেতা জানান, দাম কিছুটা কমালে সারা বছর ব্যবসা চাঙা থাকবে। প্রচুর কয়লা আমদানি করা যাবে। এতে ক্রেতারা কম দামে কিনতে পারবেন। ফলে শ্রমিকরা সারা বছর কাজ করে সংসার চালাতে পারবেন। বেকার সময় কাটাতে হবে না।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া বন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ জানান, গত ২২ ডিসেম্বরের পর আর ভারত থেকে কয়লা আসেনি। এরপর থেকেই কয়লা আমদানি বন্ধ আছে।
তিনি আরও জানান, ইন্দোনেশিয়ার কয়লা জাহাজে করে বাংলাদেশে আসে। এগুলোর গুণগত মান ভারতীয় কয়লার চেয়ে কিছুটা কম। এজন্য কয়েক হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করা হয়। কিন্তু ভারতীয়রা দাম কমাতে নারাজ। ফলে তাদের কয়লা আমদানি কম হচ্ছে। সারা বছর আমদানি-রফতানি ঠিক রাখতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও বেকার থাকতে হবে না।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা তমাল কান্তি বলেন, ‘গত অর্থবছরে কয়লা আমদানি খুব কম হয়েছে। তবু ২০ লাখ টাকার মতো রাজস্ব আদায় হয়েছিল।’ সারা বছর আমদানি-রফতানি চাঙা থাকলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে জানান তিনি।