আমাদের দেশে অনেক নৃগোষ্ঠী পাহাড়ে বসবাস করে। যারা মুলত পাহাড়ি নামে পরিচিত। আজ তাহলে তাদের জীবনযাপন নিয়ে জানা যাক। চাকমা বা চাঙমা বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী। চাকমারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় চাঙমা শব্দই ব্যবহার করে থাকে। চাকমারা মঙ্গোলীয় জাতির একটি শাখা। বর্তমান মিয়ানমারের আরাকানে বসবাসকারী ডাইংনেট জাতিগোষ্ঠীকে চাকমাদের একটি শাখা হিসেবে গণ্য করা হয়। এবং এরা প্রধানত থেরাবাদ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। বুদ্ধপুর্ণিমা ছাড়া তাদের অন্যতম প্রধান আনন্দ উৎসব হচ্ছে বিজু ।বাংলাদেশের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এদের সংখ্যা বেশি। তবে বান্দরবানেও সংখ্যায় চাকমাদের উপস্থিতি রয়েছে। চাকমা জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ বর্তমান ভারতের উত্তর-পূর্বাংশে তথা ত্রিপুরা ও অরুণাচল মিজোরাম রাজ্যে বসবাস করছে। এছাড়া চাকমাদের বড় একটি অংশ অভিবাসন নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। এদের প্রধান জীবিকা কৃষি কাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমতল অংশে স্বাভাবিক সেচ পদ্ধতিতে মৌসুমী কৃষি কাজ, এবং পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের মাধ্যমে চাকমা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও রবিশস্য উৎপাদন করে থাকে।
চাকমাদের ভাষার নামও চাঙমা। চাকমাদের নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। চাকমারা ৪৬টি গোজা ও বিভিন্ন গুত্তি বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৭ জন। তবে বর্তমানে তা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। চাকমারা পূর্বে মহাযানী বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার পাশাপাশি কিছু কিছু হরি ধর্মও চর্চা করত পরবর্তীতে সবাই মহাযান থেকে হীনযান বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে।মারমা বাংলাদেশের একটি উপজাতি ও বৃহৎ জাতিসত্ত্বা। তিন পার্বত্য জেলায় তাদের বসবাস দেখা গেলেও মূল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের বসবাস বান্দরবানে। ‘মারমা’ শব্দটি ‘ম্রাইমা’ থেকে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারা মিয়ানমার থেকে এসেছে বিধায় তাদের ‘ম্রাইমা’ নাম থেকে নিজেদের ‘মারমা’ নামে ভূষিত করে।মারমাদের বাড়ি “মাচাং” নামে পরিচিত। মাচাঙ গুলোর উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুট হয়। তাদের ঘরগুলি হয় চারকোণা আকৃতির। ঘরের দেয়ালগুলি বাঁশ দ্বারা এবং ঘরের ছাদ কাঁচা ঘাস দিয়ে আবৃত থাকে। প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য মাচার নিচ থেকে একটি মই সংযুক্ত থাকে।
তাদের ঘরগুলো বিভিন্ন কক্ষে বিভক্ত এবং বায়ুচলাচলের জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়। প্রতিটি ঘর চারদিকে বেড়া দিয়ে আবৃত থাকে। মাচাঙের নীচের স্থানটি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন গবাদি পশু রাখা, জ্বালানী কাঠ সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। মারমাদের কিছু কিছু বাড়ি মাটি দ্বারা তৈরি করে থাকে। গারো ইতিহাস নৃ-বিজ্ঞানীর মতে, গারো মঙ্গোলীয় জাতির তিববতী-বার্মিজ শাখার বোড়ো উপশাখার অন্তর্ভুক্ত। গারোদের আদি বাসভূমি ছিল চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সিন-কিয়াং প্রদেশে। সেখান থেকে দেশত্যাগ করে পরবর্তীকালে চলে যান তিব্বতে।
পরবর্তী, তারা ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে এবং বাংলাদেশের বসবাস শুরু করে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে গারো পাহাড়ে তাদের বসবাস শুরু হয়। এছাড়াও গারো পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, নাগাল্যান্ডে এবং দিনাজপুরে সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাস করে। গারোদের নিজস্ব উপভাষা রয়েছে।