স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গত বছরের ২৫ জুন। এ বছরের ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সেতুটি দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া প্রান্তে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করে ট্রেন। এবার ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করছে।
আগামী ১০ অক্টোবর নতুন এই রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ট্রেনে চড়ে রাজধানীতে আসা-যাওয়ার বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন খুব সহজেই পূরণ হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি পরীক্ষামূলকভাবে ছেড়ে যায়। এ সময় বিপুলসংখ্যক মানুষকে রেললাইনের দুপাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা রেলস্টেশনে যাবে যাত্রীবাহী এই ট্রেন। ট্রেনটি আবার ভাঙ্গা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ফিরে আসবে।
কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেনে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
তিনি বলেন, “আজ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলবে। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে শুরু হচ্ছে রেল যোগাযোগ। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এই রেল যোগাযোগ যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। ঢাকা-ভাঙ্গা রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের পরে যোগাযোগব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে। এর সুফল সারাদেশের মানুষ পাবে।”
পরীক্ষামূলক চলাচল করা ট্রেনের চালক মো. আবুল কাশেম অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমি এর আগেও প্রথম ট্রায়ালে ছিলাম। আজ অফিশিয়ালি ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালু হচ্ছে। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগব্যবস্থার নতুন ধার উন্মোচিত হচ্ছে।”
লোকোমাস্টার মো. আবুল কাশেম বলেন, “আমাদের ট্রেনের সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। সব সিগন্যাল ঠিক থাকলে আজ ট্রেনটি ৬০ কিলোমিটার বেগে চলবে। যদি এই গতিতে স্বাভাবিকভাবে যেতে পারি, তাহলে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে।”
পরীক্ষামূলক এই ট্রেনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা রয়েছেন।
বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু ১৭ অক্টোবরের পর
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করার এক সপ্তাহ পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে একটি ট্রেন চলাচল করবে। এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়মিত চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রথম অংশ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটারের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের ৮২% কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া অংশে অগ্রগতি ৮০.৫০% এবং মাওয়া-ভাঙ্গার ৯৬.৫০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর প্রথমাংশে রেললাইন নির্মাণ শতভাগ হলেও নতুন চার স্টেশন এবং ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর দুই ব্রিজের কাজ এখনো বাকি আছে। দ্বিতীয়াংশের নতুন চার স্টেশনের দুটির নির্মাণ শেষ হলেও দুটি স্টেশন এবং ব্যালাস্টেড ট্রাক ও সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি আছে।
এছাড়া ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের কাজ ৭৮% শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রেললাইন নির্মাণ প্রায় ৯৯% হলেও নতুন ৯ স্টেশন এবং ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর একটি ব্রিজের কাজ এখনো বাকি আছে।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনে। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।