নড়াইলের তনিমা আফরিন নামে এক গৃহবধুর চারতলা বাড়িতে ঢুকতে গেটে বিশাল আকৃতির কাগজী ফুল ও ঝাউ গাছ যেন তাদের স্বাগত জানায়। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে দুধারে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট টবে সাজানো সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছ। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বিনোদন, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে জুড়ি নেই ছাদ বাগানের।
নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে নিজেদের ‘অন্তি কটেজ’ বাড়ির চারতলা ভবনের তিন হাজার বর্গফুট ছাদে স্বামীর নাজমুল হকের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন মনোরম এক ছাদ বাগান। নাজমুল হক একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। ২০১৬ সালে শখের বসে কয়েকটি ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে আফরিনের ছাদ বাগান শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বাণিজ্যিকভাবে রুপ নিয়েছে। তার শখ এখন নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে ছাদের দরজা খুলতেই চোখে পড়ে প্লাস্টিকের ব্যারেলে, মাটির চাড়িতে ও বিভিন্ন ধরনের টবে মাটি দিয়ে সাজানো সারিবদ্ধ ফুল, ফল, ওষুধি, শাকসবজিসহ নানা জাতের ছোট বড় প্রায় ৬০০ গাছ। যেটি দেখে ক্ষণিকের জন্য অনেকের মনে হবে এটি কোনো ছাদ বাগান নয় বরং মাটির ওপর তৈরি বাগান।
এ ছাদ বাগানে ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, আঙ্গুর, পাঁচ জাতের মালটা, বারো মাসি আমড়া, মিষ্টি তেতুল, তিন জাতের কলা, বারোমাসি থাই পেয়ারা, সিডলেস পেয়ারা, অস্ট্রেলিয়ান দেশি ডালিম, মিশরীয় তীন ফলসহ (ডুমুর) বারো জাতের তীন ফল, বাতাবি লেবু, কাগজী লেবু, সিডলেস লেবু, পিস ফল, লাল ও সাদা জাতেরসহ চার জাতের ড্রাগন ফল, সাদা ও লাল জাতের মেওয়া ফল, নাশপতি, গোলাপজাম, দুই ধরনের লঙ্গনফল, রয়েল ফল, পিচফল, কাউফল, দুই জাতের মালবেরি, কামরাঙ্গা, করমচা, কাশমেরী আপেল কুল, বাউ আপেল কুল, নারকেলী কুল, আপেল কুল, আম- ব্যানানা ম্যাংগো, বারী-১১ আম, কিউ-জাই, বারো মাসি কাটিমন আম, পালমাল আম, স্ট্রবেরি পেয়ারা, মাধুরী পেয়ারা, কদবেল, দুই ধরনের ছবেদা, দুই ধরনের কদবেলসহ অজানা হরেক রকমের ফল।
ফুলের মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন ধরনের গোলাপ, ক্যামেলিয়া, জবা, এ্যাডেনিয়াম, জুই, করবী, বেলি, হাসনাহেনা, ব্লেডিং হার্ট, কৃষ্ণচুড়া, মালঞ্চ, কালঞ্চ, শাপলা, শিউলি, কাটা মুকুট, নন্দিনী, রঙ্গন, গ্রাউন্ড অর্কিডসহ নানা জাতের ঋতু ভিত্তিক ফুল।
সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, কালো টমেটোসহ পাঁচ জাতের টমেটো, করলা, লাল শাক, সবুজ শাক, ডাটা, লাউ, সিম, মিষ্টি কুমড়া, আলু, ধনেপাতা, বারোমাসি সজনে। মশলার মধ্যে রয়েছে পিয়াজ, রসুন, আদা, চুইঝাল, তেজপাতা, আলু বোখরা, লবঙ্গ, গোলমরিচ ও পাঁচ জাতের মরিচ ইত্যাদি। বাগান দেখতে আসা মারজান ইসলাম বলেন ছাদ বাগানটা অনেক সুন্দর। অনেক গাছের সমারোহ। তনিমা আপুর বাগানে আমরা প্রায় আসি, এখানে আসলে মনটা অনেক ভাল হয়ে যায়।
তনিমা আফরিন বলেন, আমার আম্মা তহমিনা হুসাইন একজন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা। মায়ের থেকে দেখে ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি একটা গভীর ভালবাসার সৃিিষ্ট হয়। প্রথমে শখের বসে ছাদে সৌন্দর্য বর্ধন ও সময় কাটানোর জন্য ছাদে ফুল গাছ লাগাই। পরে আম্মার উৎসাহ, সহযোগিতা ও পরামর্শে নানা ধরনের ফল, সবজি ও ওষুধি গাছ লাগাই। পরবর্তীতে এ ছাদবাগান সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে আমাকে বড় ধরনের সহযোগিতা ও উৎসাহ দেন এক বড়ভাই। ছাদ বাগানের আয় ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, শখ থেকে নেশা এবং পরবর্তীতে পেশায় রুপ নিয়েছে ছাদ বাগান। সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে শুধু কলম চারা বিক্রি করে বাৎসরিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা উপার্জন হয়। ফল ও সবজি বিলিয়ে বেশি আত্মতৃপ্তি পাই।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, বিশেষ করে কৃষিতে নারীর ভূমিকা শীর্ষক অবদান রাখায় তনিমা আফরিন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকায় ছাদবাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে।