ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবসহ সারা দেশে বেড়েছে জ্বর-সর্দি প্রভাব। এমন অবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবারই বেশি করে ফল-মূল খাওয়া প্রয়োজন।
বিশেষ করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশি করে ফলের জুস খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই ফলের বাজারে আগুন যেন বেড়েই চলেছে।
প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে বিদেশি ফলের দাম। তবে তুলনামূলক কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে দেশি ফলগুলো।
শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায়, নাশপতি ২৭০ থেকে ২৮০, লাল আঙুর ৪২০, সবুজ আঙুর ৪০০, ফুজি আপেল ২৮০ থেকে ৩০০, গালা আপেল ২৮০ থেকে ৩২০, সবুজ আপেল ৩৮০ থেকে ৪২০, অস্ট্রেলিয়ান আপেল ৩০০ থেকে ৩৩০, কমলা ৩৬০ থেকে ৪০০, সাম্বাম ১৫০, নাগফল ২৬০ থেকে ৩২০, আনার ৩০০ থেকে ৪৫০ ও ড্রাগন ফল ২৫০ থেকে ৩২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ বিদেশি ফলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে মাল্টার দাম প্রায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। এছাড়া আনার, আঙুর, কমলাসহ আরও কিছু ফলের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বেড়েছে। শুধু কেজিতে ৪০ টাকা কমেছে সবুজ আপেলের দাম।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নূর হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, প্রতি সপ্তাহে ফলের দাম বাড়ছে। কিন্তু কেন বাড়ছে সেটা আর আমদানিকারকরা বলেন না। তারা শুধু দাম বাড়ায়। এখন আনার, লাল আঙুর, কমলার সিজন। কিন্তু তারপরেও এসব ফলের দাম অনেক বেশি। আমরা বাদামতলী থেকে ফল কিনে এনে বিক্রি করি। কেজিতে ১০-১২ টাকা লাভ করি। কেন দাম বাড়ছে সেটা বলতে পারবো না।
মো. মামুন হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, বর্তমানে সিজন হিসেবে ফলের দাম অনেক বেশি। ফল আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ায় আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। যার কারণে বাজারে বিদেশি ফলের সরবরাহ কম। আর এজন্যই তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছেন। আর রাজধানীতে যেহেতু বাদামতলী ছাড়া আর কোথাও ফল আমদানি করা হয় না, তাই তারা যে দামে বিক্রি করেন আমাদেরও সেই দামেই কিনতে হয়। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে বাজার যাচাই করে কেনার উপায় নেই।
তিনি আরও বলেন, এক মাস আগে ১৫ কেজির এক কার্টুন মাল্টা কিনেছি দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। অথচ গতকাল সেই একই মাল্টা কিনতে হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে। এক মাস আগে ৭ কেজির এক কার্টুন লাল আঙুর কিনেছি দুই হাজার ১০০ টাকায়, যা গতকাল কিনতে হয়েছে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। ২৫০ টাকা কেজির আনার গতকাল পাইকারিতেই কিনতে হয়েছে ৩৫০ টাকা করে। তাহলে আমরা কত করে বিক্রি করবো। বিদেশি ফলের দাম যা বাড়ে, সেটা আমদানিকারকরাই বাড়ায়।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ফলের দাম বাড়ার পেছনে কারণ যেটাই হোক বা যারাই দোষী হোক, শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগী শুধু সাধারণ মানুষ। সিন্ডিকেট করে ফলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
তরিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ফল আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানোয় ফলের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যাবে এটা অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে সেটার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করেন। ফলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ট্যাক্স বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফলের দাম। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বা চাকরিজীবীরা চাইলেও এত দাম দিয়ে ফল কিনতে পারেন না। কারণ আমাদের বেতন তো আর বাড়েনি।
হাসনাত নাঈম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এখন সব জায়গায় ডেঙ্গুসহ নানা ধরনের অসুখ বিসুখ হচ্ছে। ডাক্তাররা ফল খাওয়া জন্য বলছেন। এতেই ব্যবসায়ীরা ফলের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। নইলে এক সপ্তাহে মাল্টার দাম কেজিতে ১০০ টাকার বেশি কেন বাড়বে? ডাবের দাম কেনো ২০০ টাকা হবে? এদেশে সবাই সুযোগ খোঁজে। দিনশেষে সাধারণ মানুষেরই কষ্ট করতে হয়।
এদিকে দেশি ফলের দাম তুলনামূলক কিছুটা কম দেখা গেছে। আমের সিজন প্রায় শেষের পথে। বড়জোর আর হয়তো দুই সপ্তাহ পাওয়া যেতে পারে। তাই প্রতি কেজি আশ্বিনী আম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, ঝিনুক আম ২০০ থেকে ২৫০, গৌড়মতি আম ২২০ থেকে ২৫০ ও কাটিমন আম ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি পেয়ারা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ক্যালেন্ডার জাতের আনারস ৩৫ থেকে ৮০, জলডুগি জাতের আনারস ৪৫ থেকে ১০০, আমড়া ৪০ থেকে ৬০, পেঁপে ৭০ থেকে ৯০, দেশি মাল্টা ৮০ থেকে ১০০, জাম্বুরা ৩০ থেকে ১০০, তরমুজ ৬০ থেকে ৭০, আমলকী ২০০ থেকে ৩০০ ও আতা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ডাব ৯০ থেকে ১৩০ টাকা, বেল ৬০, তাল ৫০ থেকে ১৫০, কদবেল ৫০, প্রতি ডজন সাগর কলা ৯০, বাংলা কলা ৬০ থেকে ৭০, সরবি কলা ৬০ থেকে ১১০ এবং চিনি চম্পা কলা ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা বলেন, বিদেশি ফলের তুলনায় দেশি ফলের দাম কিছুটা কম। শুধু আমের সিজন শেষ তাই এর দাম একটু বেশি। আর হয়ত এক সপ্তাহ আম পাওয়া যাবে। এরপর আর পাওয়া যাবে না।