জীবন তো একটাই। প্রতি মূহুর্তে জীবন খুবই সুন্দর, শুধু জীবনে বাঁচতে শিখতে হয়। জীবনকে ভালোবেসতে শিখতে হয়। তবে তা শিখতে পারছে ক’জন!! সারা পৃথিবীতে আত্মহত্যা যেন একটা নদীর স্রোত ধারায় পরিণত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার সংখ্যা। জীবনের প্রতি বাড়ছে গ্লানি, কমছে ভালোবাসা,বাড়ছে হীনমন্যতা ও মনোরোগ। নিজের জীবন শেষ করে যাঁরা অজানা দেশের পথে পাড়ি দিচ্ছে, শোকাহত হচ্ছেন তাঁদের পরিবার পরিজন কাছের মানুষেরা।
আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে তার প্রতিরোধে ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ই সেপ্টেম্বর দিনটি পালন করা হয় ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ‘ইন্টারন্যাশানাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ’ একসঙ্গে এই বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করে।
একটি জরিপে দেখা গেছে, আত্মহত্যা করার প্রবণতা করোনা মহামারী আসার পর আরও দ্রুত হারে বেড়েই চলেছে।
২০১৫ সালের পর থেকে আত্মহত্যার সংখ্যা প্রত্যেক বছর ক্রমাগত হারে বেড়ে চলেছে। গত বছর সারা দেশে আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু হয়েছে ১,৬৪,০৩৩ জনের। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে দেশে আত্মহত্যার হার ৩.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যার হার ০.২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.২%। বাংলাদেশে ২০২১ সালে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিজের হাতেই নিজের জীবন নিয়েছেন।তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯.৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছে। কারণ বিবেচনায় দেখা যায় অভিমান, প্রেমঘটিত, পারিবারিক বিবাদ যৌন হয়রানির ঘটনায় এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি যে কারণগুলি দেখা যাচ্ছে সেগুলো হল হতাশাবোধ, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক অনিশ্চয়তা, ক্লান্তি, প্রাণহানির ভয়, বেতন কাটা, চাকরি হারানো, পরিবারে হিংসা এবং অর্থনৈতিক অসুবিধা। পেশা অনুযায়ী দেখা যায় দিনমজুর, গৃহবধূ এবং স্বরোজগারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হল সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
মানুষ হয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।যাঁরা সামাজিক কারণে তাঁদের সমস্যার কথা বলতে পারেননা, সেসকল মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাদের। তাঁদেরকে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। নিজের জীবনকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে। হতাশাগ্রস্থ মানুষদের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে হবে। তবেই কমতে পারে আত্মহত্যার মতন ধ্বংসকারী ঘটনা।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে, একসঙ্গে সবাইকে শপথ নিতে হবে জীবনকে ভালোবাসার।
মাথায় রাখতে হবে ‘আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়, আত্মহত্যা মহাপাপ’।
আত্মহত্যা কখনোই সমাধান নয়। যদি জীবনকে অর্থহীন মনে হয়, তবে আরেকবার ভাবুন। আশেপাশে সাহায্যের হাত খুঁজে নিন।কেউ না কেউ অবশ্যই হাত বাড়িয়ে দিবে আপনার জন্য। কারণ পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ আছে।
যদি আপনার নিকটবর্তী কেউ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে তবে আপনি নিজেই হয়ে উঠুন সেই সাহায্যের হাতটি। আসুন আত্নহত্যাকে না বলি, সুন্দর জীবন গড়ি।
লেখা: জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি
শিক্ষার্থী, যশোর সরকারি মহিলা কলেজ।