সকালে ঘুম ঘুম চোখে মুঠোফোন হাতে নিতেই ম্যাসেন্জারে টুংটাং শব্দ। ‘আমরা চলে এসেছি, আপনারা সবাই কোথায়? তাড়াতাড়ি চলে আসেন অনেক কাজ বাকি।’ অবশেষে ঘুমের মায়া ত্যাগ করে রেডি হয়ে উকুলেলে কাঁধে চাপিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
গন্তব্য ৩২ একরের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) একাডেমিক ভবনের সি ব্লকের ১০৪ নম্বর কক্ষ। সেখানে আজ গবির সবচেয়ে প্রাচীন সংগঠন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) একাদশ কমিটির একঝাঁক কলম সৈনিকদের চড়ুইভাতি।
গন্তব্যে পৌঁছেই দেখি মাংস কাটাকুটির কাজ শুরু করে দিয়েছে মিমি আপু। একপাশে মুনিয়া আপু লেগে পড়েছে পেয়াজ, রসুন কাটার কাজে। ছেলেরা ব্যস্ত লাকড়ি জোগাড় করতে। সবার কাজের ধুম দেখে হাত লাগালাম কাজে। পাশেই ইট নিয়ে বানানো হলো চুলা। সব প্রস্তুতি শেষ, এবার চুলায় চাপানো হবে রান্না। সবাই আগ্রহ নিয়ে চুলার চারপাশ ঘিরে দাড়িয়ে আছে। রান্নাবান্নার সব দায়িত্ব পড়েছে ইউনুসের কাঁধে। তিনিই আজ বাবুর্চি। কেরোসিনের সাহায্যে অনেক কষ্টে আগুন জ্বালিয়ে শুরু হলো রান্নার কাজ।
বসন্তের ঝলমলে রোদ আর মলিন বাতাস বইছিলো প্রকৃতিতে। বাতাসের ধাক্কায় চুলার আগুন নিভে যাওয়ার উপক্রম। হাঁড়িতে রান্না চাপিয়ে পাশেই জমে উঠলো গানের আসর। এরইমধ্যে শিমুল তুলোর মতো দেখতে ছোট্ট স্বচ্ছকে নিয়ে হাজির আমাদের অতিথি গবিসাসের আজীবন উপদেষ্টা শিহাব ভাই ও ভাবি। তারাও যোগ দিলো গানের আসরে। হাঠাৎ গানের আসর থামিয়ে দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পিংকি আপা বললেন, ‘আসেন সবাই মিলে ছবি তুলবো।’ শুরু হলো ছবি তোলা ধুম।
ছবি তোলা শেষ করতেই সবার নজরে পড়লো পাশে বরই গাছের বরইয়ের দিকে। দলবেঁধে শুরু হলো বরই কুড়ানো। পিংকি আপা ইউনুস ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে চক্কর দিতে লাগলো এপাশ-ওপাশ। তার সাইকেল চালানো দেখে মিমি আপু, ‘আমিও সাইকেল চালানো শিখবো’ বলে বায়না ধরে বসলো। বিজয় আর শান্ত মিলে লেগে পড়লো তাকে সাইকেল চালানো শেখাতে। সবার মধ্যেই আনন্দ বিরাজমান। চোখেমুখে উৎসবের আমেজ।
এরইমধ্যে সূর্য অলস হয়ে পশ্চিমের বুকে ঢুলতে শুরু করেছে। হাঁড়ি থেকে বিরিয়ানির বাসনা এসে নাকে লাগতেই পেট জানান দিলো ক্ষুধা লেগেছে। ইউনুস ভাই হাস্যোজ্জ্বল মুখে জানিয়ে দিলো রান্নার কাজ শেষ, বিরিয়ানি প্রস্তুত। এবার শুরু হবে ভুঁড়ি ভোজ। গবিসাস কার্যালয়ের পাশেই মিডিয়া চত্বরে বসে খাওয়াদাওয়া হবে। ইউনুস ভাই প্লেটে প্লেটে তুলে দিলো বিরিয়ানি। শুরু হলো খাওয়াদাওয়া। সবাই রান্নার প্রশংসা করাতে ইউনুস ভাই খুশিতে গদগদ।
গান, আড্ডা আর খাওয়াদাওয়ার মধ্য দিয়েই কেটে গেলো গবিসাসের একাদশ কমিটির আরো একটি সুন্দর বসন্তের দিন। চড়ুইভাতিটি গবিসাসের অন্যতম স্মৃতিময় একটি দিন হয়ে বাঁধা থাকবে। বসন্ত চলে গেলেও বসন্তের এমন স্মৃতি জ্বলজ্বল করবে গবিসাসে। কলমকে শক্তি বানিয়ে আরো হাজারটা বসন্ত পারি দিক প্রিয় সংগঠন গবিসাস। জয়তু গবিসাস।