আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এ বছর ঢাকার সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ নৌপথে বাড়ি যাবে। এই সংখ্যা আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার; যা ঢাকার মোট ঈদযাত্রীর ১৫ শতাংশ। দুই বছর আগে এই সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৩৭ লাখ।
গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) ঈদ-পূর্ব খাতভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হয়।
এসসিআরএফ জানায়, এসব যাত্রী ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে লঞ্চে যাবে। এই সাড়ে ২২ লাখ মানুষের সিংহভাগ বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী। বাকি যাত্রীরা যাবে চাঁদপুর, মাদারীপুর শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি ঈদুল ফিতরে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছেড়ে যায়। দুই বছর আগে ঢাকার ঈদযাত্রীদের ২৫ শতাংশ (৩৭ লাখ ৫০ হাজার) নৌপথ ব্যবহার করত। আর সড়ক ও রেলপথে যাতায়াত করত যথাক্রমে ৫৫ ও ২০ শতাংশ মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর চাঁদপুর, মন্সীগঞ্জ ও হাতিয়া ছাড়া অন্য জেলাগুলোর নৌযাত্রীর হার ৪০ শতাংশ কমেছে; যা মোট ঈদযাত্রীর ১০ শতাংশ। এই হিসেবে এবার ঈদে নৌপথে যাবে আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হবে। তবে ঘরমুখী জনস্রোত কার্যত শুরু হবে ৪ এপ্রিল থেকে। ওইদিন থেকে ঈদ স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। ৪ থেকে ১০ এপ্রিল (ঈদের আগের দিন) পর্যন্ত সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়বে। এই হিসেবে প্রতিদিন ৩ লাখের বেশি যাত্রী সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে গন্তব্যে যাবে।
নৌযান স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজে-কলমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে তীব্র নাব্যসংকট ও যাত্রীস্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১০টি নৌপথ ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বাকি ৩১টি নৌপথে ঈদ উপলক্ষে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ছোটবড় ১৭৫টি লঞ্চ চলাচল করবে।
এসসিআরএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিদিন ৮৪ (১৭৫ এর অর্ধেক) লঞ্চে ৩ লক্ষাধিক যাত্রী বহন করা হলে একটি লঞ্চে গড়ে প্রায় ৩,৫০০ যাত্রী উঠবে। কিন্তু কোনো লঞ্চেরই দুই হাজারের বেশি ধারণক্ষমতা নেই। অনেক লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজারেরও নিচে। এ ছাড়া ঈদের আগের তিন দিন ঘরমুখী জনস্রোত দেড়গুণ বেড়ে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রীচাপ সামাল দিতে অনেক লঞ্চে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ মানুষ বহন করা হয়ে থাকে। ফলে ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী তোলা হবে। এ ছাড়া এবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে কালবৈশাখী মৌসুমে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সাগরে লঘুচাপের আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে নৌযাত্রায় বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগের পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বিড়ম্বনামুক্ত নিরাপদ ঈদযাত্রার স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে বিকল্প ব্যবস্থায় নৌযানের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া টার্মিনালসহ নৌপথে সর্বোচ্চ নজরদারি ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।