ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে অবসর নিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৯১ বছর বয়সী মনমোহন সিং। এর মাধ্যমে রাজ্যসভায় নিজের ৩৩ বছরের দীর্ঘ সংসদীয় ইনিংস শেষ করলেন তিনি। রাজ্যসভা হলো ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
মনমোহন সিংকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি আবেগঘন চিঠি পোস্ট করেছেন কংগ্রেস সভাপতি কংগ্রেস মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, ‘এই অবসরে এক যুগের অবসান হলো। আবেগঘন চিঠিতে খাড়গে আরও বলেন, ‘আপনি সকলের কাছেই হিরো হয়ে থাকবেন।’
মনমোহনের উদ্দেশে কংগ্রেস সভাপতি লিখেছেন, ‘সক্রিয় রাজনীতি থেকে আপনি অবসর নিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু আমি আশাবাদী আপনি জ্ঞানের কণ্ঠস্বর হয়ে থাকবেন। এবং যখনই সম্ভব হবে দেশের নৈতিকতার মাপকাঠি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন। আপনার সুস্থ, শান্তিপূর্ণ জীবনের কামনা করি।’
বুধবার (৩ এপ্রিল) সংসদে ৩৩ বছর পূর্ণ হয়েছে মনমোহন সিংয়ের। তার সংসদীয় যাত্রা আজ শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘বর্তমান সময়ের যে নেতারা আপনার কর্মকাণ্ড নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন, তারা পক্ষপাতিত্বের কারণে আপনাকে স্বীকৃতি দিতে চান না। খুব কম মানুষই বলতে পারবেন আপনার থেকে বেশি উদ্দীপনা ও ভক্তি সহকারে দেশের সেবা করেছেন। আপনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যা করেছেন, তা স্পর্শ করার সাধ্য কারও নেই।’
পোস্টে খাড়গে মনে করিয়ে দেন, মনমোহন সরকারের আমলেই ভারতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের শুরু হয়। খাড়গে লিখেছেন, ‘২৭ কোটি দরিদ্র ভারতবাসীকে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত করেছেন আপনিই।’ মধ্যবিত্ত ও যুব সম্প্রদায়ের কাছে মনমোহন সিং একজন ‘হিরো’ হয়েই থাকবেন বলে উল্লেখ করেন কংগ্রেস সভাপতি। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও মনমোহন সিং যেভাবে দলকে সময় দিয়েছেন, সেজন্যও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন খাড়গে।
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর অপ্রত্যাশিতভাবেই মনমোহন সিং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্স জোটের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনেও কংগ্রেস জয়লাভের পর মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হোন। তিনি ভারতের প্রথম শিখ ধর্মাবলম্বী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
মনমোহন সিং ছাড়াও ২ ও ৩ এপ্রিল একাধিক সাংসদ রাজ্যসভা থেকে অবসর নিয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিংভি, বিজেপি নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকড়, বিহারের সাবেক উপ মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদি, বিজেপির অনিল বালুনি, সমাজবাদী পার্টির জয়া বচ্চন, শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজিব চন্দ্রশেখর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রী নারায়ণ রানে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলিধরণ, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এল মুরুগাণ প্রমুখ।
এদের মধ্যে অশ্বিনী বৈষ্ণব ও মুরুগাণকে পরবর্তী আরেকটি মেয়াদের জন্য রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে বিজেপি। অন্যদিকে জয়া বচ্চনকে আরেকটি মেয়াদে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে সমাজবাদী পার্টি।