রাজধানীর সদরঘাটে অবস্থিত দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে নানা চিত্রে ফুটে উঠেছে নববর্ষের আগমনী সাজ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালেয়ের দ্বিতীয় ফটকের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের দেয়ালটি ময়লা-আবর্জনা ও পথচারীদের মল-মূত্রে হয়ে উঠেছিল দুর্গন্ধময়। এখন সেখানে ফুটে উঠেছে রিকশা চিত্রের অনিন্দ্য সুন্দর সব দৃশ্য। যার প্রশংসা করছেন পথচারীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিকশা চিত্রকে উপপাদ্য করে পহেলা বৈশাখ ১৪৩১ উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ফটকের পাশের দেয়ালে পেইন্টিং করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
এ সম্পর্কে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী নাঈম মৃধা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতিপাপ্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রিকশা চিত্র আমাদের এবারের বৈশাখের মূল থিম। দেয়াল চিত্র, মুখোশ স্টাকচার সবকিছুতেই রিকশা চিত্রকে উপস্থাপন করছি। দেয়াল চিত্রে আমরা রিকশা চিত্রের বিভিন্ন মোটিফ এবং উজ্জ্বল রঙগুলো ব্যবহার করছি। রিকশা চিত্রে আমরা সাধারণত নায়ক-নায়িকা, কুমির, বাঘ, মাছ, ময়ূর, ফুল, লতাপাতা ও বিভিন্ন পশুপাখির ছবি দেখতে পায়। এগুলোর মধ্য থেকে আমরা দৃষ্টিনন্দন চিত্রগুলোকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া রিকশা ও কুমির এর দুইটি স্টাকচার তৈরি করছি।
চারুকলা অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী পরমা দাস বলেন, এবারে বৈশাখ উপলক্ষে চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে আমরা এ পেইন্টিং করেছি। ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত রিকশা চিত্রকে মূল ভূমিকায় রেখে দেয়ালে পেইন্টিং করা হয়েছে। শোভাযাত্রায়ও রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হবে। রিকশা পেইন্টিংকে প্রমোট করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, এতোদিন ময়লা আবর্জনা ও শ্যাওলায় অপরিচ্ছন্ন হয়েছিল দ্বিতীয় ফটকের পাশের দেয়াল। এখন রিকশা চিত্রে চিত্রায়িত করা হয়েছে দেয়ালটি। যা দেখে খুবই মনোমুগ্ধকর লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, ময়লা-আবর্জনায় দুর্গন্ধময় হয়েছিল ফুটপাতের পাশের এ দেয়াল। ফুল, মাছ, নৌকা, বাঘ, ময়ূরসহ নানা ধরনের চিত্রাংকন করা হয়েছে দেয়ালটিতে। যা দেখে খুব ভাল লাগছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন মোহা. আলপ্তগীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রিকশা চিত্র ইউনেস্কো অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্যই বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উপলক্ষে আমরা রিকশা চিত্রের যত রকমের অঙ্কন, মোটিভ এবং চিত্রায়ণের যতগুলো অলংকরণ রয়েছে এগুলো সব রিকশাকে কেন্দ্র করেই অঙ্কন করছি। মূলত এবারে আমাদের থিম হচ্ছে রিকশা চিত্র।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে আমরা বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে চাই। সেজন্য ১৮ এপ্রিল আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করবো। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ বিগত দিনে চলে আসা সব আয়োজন থাকবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নান্দনিক রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তোলার কাজ করছে।