বাংলার রান্নায় চিংড়ির জনপ্রিয়তা অনন্য। আর কলা বা কাঁচকলা হলো এমন এক সবজি, যা স্বাস্থ্যকর ও সহজপাচ্য। এই দুই উপাদান একসঙ্গে মিশলে তৈরি হয় অসাধারণ স্বাদের এক পদ — চিংড়ি কলা। এটি শুধু ভাতের সঙ্গে নয়, রুটি বা পরোটার সাথেও খেতে দারুণ লাগে। ঘরেই সহজভাবে বানানো যায় এই মুখরোচক রান্না। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে তৈরি করবেন চিংড়ি কলার এই বিশেষ পদটি।
এই রান্নার জন্য খুব বেশি উপকরণ লাগে না, বেশিরভাগই ঘরে পাওয়া যায়। নিচে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর তালিকা দেওয়া হলো —
মাঝারি আকারের চিংড়ি – ২৫০ গ্রাম
কাঁচকলা – ৪ থেকে ৫টি
পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
রসুন বাটা – ১ চা চামচ
আদা বাটা – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – ½ চা চামচ
মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ (রুচি অনুযায়ী)
জিরা গুঁড়া – ½ চা চামচ
ধনে গুঁড়া – ½ চা চামচ
লবণ – পরিমাণমতো
তেল – ৪ টেবিল চামচ
কাঁচা মরিচ – ৩ থেকে ৪টি
ধনেপাতা কুচি – অল্প (সাজানোর জন্য)
প্রস্তুতির ধাপ
১. কাঁচকলার প্রস্তুতি
প্রথমে কাঁচকলাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে গোল করে কেটে নিন। এরপর সামান্য লবণ ও হলুদ মেখে ফুটন্ত পানিতে ৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। তারপর পানি ঝরিয়ে আলাদা রাখুন।
২. চিংড়ির মেরিনেশন
চিংড়িগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর সামান্য লবণ ও হলুদ গুঁড়া মেখে ১০ মিনিট রেখে দিন।
৩. চিংড়ি ভাজা
একটি কড়াইতে তেল গরম করে হালকা আঁচে চিংড়িগুলো লালচে করে ভেজে তুলে নিন। খুব বেশি সময় ভাজবেন না, না হলে শক্ত হয়ে যাবে।
৪. মসলা ভাজা
একই কড়াইতে বাকি তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ সোনালি হলে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন। এরপর হলুদ, মরিচ, জিরা ও ধনে গুঁড়া দিয়ে মসলা কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষাতে পারেন।
৫. কলা ও চিংড়ি মেশানো
মসলা কষানো হলে সেদ্ধ কাঁচকলাগুলো দিন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। ২–৩ মিনিট নাড়ার পর ভাজা চিংড়ি দিন। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন। প্রয়োজনে অল্প গরম পানি দিন যাতে সবকিছু ভালোভাবে মিশে যায়।
৬. রান্না সম্পন্ন
মিশ্রণটি ঢেকে দিন এবং ৫–৭ মিনিট কম আঁচে রান্না করুন। পানি শুকিয়ে তেল ওপরে উঠলে নামিয়ে নিন। শেষে কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা ছিটিয়ে দিন।
পরিবেশন
গরম ভাতের সঙ্গে এই চিংড়ি কলা দারুণ লাগে। চাইলে এটি রুটি বা পরোটার সাথেও পরিবেশন করা যায়। হালকা ডাল বা ভাতের সাথে এই পদটি পুরো খাবারের স্বাদই বদলে দেয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা-
চিংড়িতে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন ও জিঙ্ক, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। অন্যদিকে কলা বা কাঁচকলায় থাকে প্রচুর ফাইবার, যা হজমে সহায়ক। তাই এই রেসিপি শুধু সুস্বাদু নয়, বরং পুষ্টিকরও বটে।
চিংড়ি ও কলার সংমিশ্রণে এই ঐতিহ্যবাহী রান্নাটি একদিকে যেমন স্বাদের দিক থেকে অনন্য, তেমনি পুষ্টির দিক থেকেও উপকারী। পরিবারের সবাইকে চমকে দিতে চাইলে একদিন ঘরেই বানিয়ে ফেলতে পারেন এই চিংড়ি কলা — সহজ, স্বাস্থ্যকর আর স্বাদে অতুলনীয়।