নগরবাসীর ভোগান্তি /

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি

অতিথি লেখক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি
ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা কয়েক দশক ধরে শহরের জনগণের জন্য নিয়মিত মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ভারী বর্ষণেই রাজধানীর প্রধান সড়ক-ঘাটে পানি জমে গণপরিবহণ ও ব্যবসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। নগরবাসীর জীবনযাত্রায় প্রভাব, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুকি বৃদ্ধির প্রতিবেদনগুলো দেখায় যে এই সমস্যা শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নয়, বরং ভূ-ব্যবহার, ড্রেনেজ অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমন্বিত ফলাফল। তাই ঢাকা জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি ও বহুমাত্রিক কৌশল দাবি করে।

ঢাকার জলাবদ্ধতার মূল কারণগুলোর মধ্যে অব্যবস্থাপিত নগরায়ন ও খাল-দখল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। দ্রুত বাড়তি নির্মাণ ও অবৈজ্ঞানিক ভূমি ব্যবহার খাল-বিলে জায়গা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে বৃষ্টির জল স্বাভাবিক পথে নেবে না। অপরদিকে পুরনো ও অপ্রতুল ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক শহরের দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি; সঙ্কীর্ণ নালিকা ও অপর্যাপ্ত পাইপলাইন হঠাৎ বর্ষায় পানিকে দ্রুত স্রোত করে নিতে অপারগ। এ সঙ্গে ড্রেনাল সিস্টেমে ময়লা ও নির্মাণবর্জ্য ফেলা, প্লাস্টিক আবর্জনা ও গৃহস্থালির ময়লা নালায় জমে পানি চলাচল রোধ করে—যা ঢাকা ড্রেনেজ সমস্যাকে তীব্র করে তোলে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারী বর্ষণ ও অপ্রত্যাশিত জলপৃষ্টির ঘটনাও বাড়ছে, ফলে নগর এলাকার ভূ-উপযোগিতা হারার ফলে পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

তৎক্ষণিকভাবে (শর্ট-টার্ম) কার্যকর কিছু পদক্ষেপে দ্রুত লাঘব দেখা যেতে পারে। প্রধান ড্রেন ও কালেকশন চ্যানেলগুলিতে জরুরি পরিষ্কারকরণ অভিযান চালিয়ে আবর্জনা ও সেডিমেন্ট সরানো যেতে পারে, যা স্রোত পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে। এছাড়া পাম্পিং স্টেশন বাড়ানো ও অস্থায়ী পাম্প মোতায়েন করে বৃষ্টির সময় জমে থাকা পানি দ্রুত নদী বা বড় কালভ্যানেতে রূপান্তর করা সম্ভব। জরুরিভাবে জলাবদ্ধতা প্রবণ প্রধান সড়ক এলাকায় অস্থায়ী ড্রেন চালানো এবং ট্রাফিক লেভেলে পানি অপসারণ ব্যবস্থা নেওয়া নাগরিক-মুভমেন্ট সচল রাখতে সহায়তা করবে। এই পর্যায়ে গণচেতনা বৃদ্ধি, নালায় আবর্জনা ফেলা বন্ধে স্থানীয় অভিযান ও জরিমানা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

মধ্যম মেয়াদে (মিড-টার্ম) খাল পুনরুদ্ধার ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক পুনর্নির্মাণ মৌলিক ভূমিকা পালন করবে। দখলকৃত খালগুলোর আইনগত উদ্ধারে প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে খাল পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং মেকানিক্যাল ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সেডিমেন্ট অপসারণ করা দরকার। ড্রেনেজ নকশা বড় করে, কালেকশন বেসিন স্থাপন করে এবং রাস্তা নির্মাণে নালী-লাইন বজায় রেখে রেইনওয়াটারকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সবুজ অবকাঠামো যেমন রেইন গার্ডেন, পার্ক ও পার্মাবল বাফার তৈরির মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠে পানি শোষণের সক্ষমতা বাড়ানো যায়; এতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরও পুনরায় পূরণ হবে।

দীর্ঘমেয়াদে (লং-টার্ম) ঢাকা জলাবদ্ধতা বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে নীতিগত ও পরিকল্পনাগত সংস্কারের দেখা প্রয়োজন। পরিকল্পিত নগরায়ন ও ভূমি ব্যবহারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন এবং খাল-বিলে বাণিজ্যিক উন্নয়ন বন্ধ করা প্রয়োজনীয়। অবকাঠামো পরিকল্পনায় ক্লাইমেট-রেসিলিয়েন্ট নকশা অন্তর্ভুক্ত করে ভবন, রাস্তা ও সেতুতে সম্ভাব্য বন্যা উচ্চতা ধরা দরকার; এ ছাড়া সামগ্রিক জল ব্যবস্থাপনার নীতি প্রণয়ন করে ঝুঁকি-ভিত্তিক অবকাঠামো বিনিয়োগ নির্ধারণ করতে হবে। আইনি কাঠামো শক্তিশালী করে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং কর্পোরেশন ও ডেভেলপারদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা গেলে পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

টেকনোলজি ও ইনোভেশন ঢাকার ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্মার্ট ড্রেনেজ সিস্টেম—রিয়েল-টাইম সেঞ্চর, অটোমেটেড পাম্পিং কন্ট্রোল এবং হাইড্রোলজিকাল মডেল—খাবার মতো জলস্তর পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে, ফলে বিপদের আগেই প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে। রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং বাড়ি ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রয়োগ করে অতিরিক্ত জলের উৎস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই সব প্রযুক্তি স্যাটেলাইট ইমেজ ও ড্রোন সার্ভে মিলিয়ে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) ভিত্তিক ঝুঁকি মানচিত্র তৈরিতে সাহায্য করবে, যাতে প্রশাসন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে টার্গেটেড পদক্ষেপ নিতে পারে।

অর্থায়ন ও অংশীদারিত্ব ছাড়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP), আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রজেক্ট-ভিত্তিক বন্ড ব্যবহার করে পুনর্গঠন ও ড্রেনেজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যেতে পারে। এগুলি বাস্তবায়নের সময় ক্ষতির আর্থিক বিশ্লেষণ দেখাতে হবে—পানি জমা না হলে ব্যবসায়িক ক্ষতি, পরিবহন ব্যয় ও স্বাস্থ্যব্যয়ের সাশ্রয় কেমন হবে—তাহলে নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ পাবে। স্থানীয় স্তরে কমিউনিটি-ভিত্তিক খাল রক্ষণাবেক্ষণ, স্বেচ্ছাসেবক ক্লিন-আপ ড্রাইভ ও নাগরিক রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম সরকার ও কর্পোরেশনের কাজকে ত্বরান্বিত করবে।

আন্তর্জাতিক অনুশীলন থেকে শিক্ষা নিয়ে ঢাকাও কার্যকর মডেল অনুসরণ করতে পারে। সিঙ্গাপুরের মতো শহরগুলো স্মার্ট ড্রেনেজ, বাফার পুকুর ও কঠোর ভূমি ব্যবস্থাপনা করে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমাতে পেরেছে; ঢাকায়ও খাল পুনরুদ্ধার, পাম্পিং স্টেশন আধুনিকায়ন ও ভৌত নকশা পরিবর্তনে গুরুত্ব দিলে দ্রুত ফল পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে নগর প্রশাসন যদি স্বচ্ছ, সময়োপযোগী ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করে—স্থানীয় জনগণ, এনজিও ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা নিয়ে—তবে টেকসই সমাধান বাস্তবায়িত হবে।

উপসংহারে বলা যায়, ঢাকা জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব কিন্তু তা একক প্রকল্পে নয়; সমন্বিত, প্রযুক্তি-সহায়িত ও নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। জরুরি পরিষ্কারকরণ ও পাম্পিং থেকে শুরু করে খাল পুনরুদ্ধার, স্মার্ট ড্রেনেজ ও পরিকল্পিত নগরায়ন—সবকিছু মিলিয়ে যদি নির্দিষ্ট সময়সীমা ও অর্থায়ন নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়, ঢাকা দ্রুতই জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় সফল শহরে পরিণত হতে পারে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি
ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা কয়েক দশক ধরে শহরের জনগণের জন্য নিয়মিত মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ভারী বর্ষণেই রাজধানীর প্রধান সড়ক-ঘাটে পানি জমে গণপরিবহণ ও ব্যবসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। নগরবাসীর জীবনযাত্রায় প্রভাব, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুকি বৃদ্ধির প্রতিবেদনগুলো দেখায় যে এই সমস্যা শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নয়, বরং ভূ-ব্যবহার, ড্রেনেজ অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমন্বিত ফলাফল। তাই ঢাকা জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধান জরুরি ও বহুমাত্রিক কৌশল দাবি করে।

ঢাকার জলাবদ্ধতার মূল কারণগুলোর মধ্যে অব্যবস্থাপিত নগরায়ন ও খাল-দখল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। দ্রুত বাড়তি নির্মাণ ও অবৈজ্ঞানিক ভূমি ব্যবহার খাল-বিলে জায়গা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে বৃষ্টির জল স্বাভাবিক পথে নেবে না। অপরদিকে পুরনো ও অপ্রতুল ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক শহরের দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি; সঙ্কীর্ণ নালিকা ও অপর্যাপ্ত পাইপলাইন হঠাৎ বর্ষায় পানিকে দ্রুত স্রোত করে নিতে অপারগ। এ সঙ্গে ড্রেনাল সিস্টেমে ময়লা ও নির্মাণবর্জ্য ফেলা, প্লাস্টিক আবর্জনা ও গৃহস্থালির ময়লা নালায় জমে পানি চলাচল রোধ করে—যা ঢাকা ড্রেনেজ সমস্যাকে তীব্র করে তোলে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারী বর্ষণ ও অপ্রত্যাশিত জলপৃষ্টির ঘটনাও বাড়ছে, ফলে নগর এলাকার ভূ-উপযোগিতা হারার ফলে পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

তৎক্ষণিকভাবে (শর্ট-টার্ম) কার্যকর কিছু পদক্ষেপে দ্রুত লাঘব দেখা যেতে পারে। প্রধান ড্রেন ও কালেকশন চ্যানেলগুলিতে জরুরি পরিষ্কারকরণ অভিযান চালিয়ে আবর্জনা ও সেডিমেন্ট সরানো যেতে পারে, যা স্রোত পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে। এছাড়া পাম্পিং স্টেশন বাড়ানো ও অস্থায়ী পাম্প মোতায়েন করে বৃষ্টির সময় জমে থাকা পানি দ্রুত নদী বা বড় কালভ্যানেতে রূপান্তর করা সম্ভব। জরুরিভাবে জলাবদ্ধতা প্রবণ প্রধান সড়ক এলাকায় অস্থায়ী ড্রেন চালানো এবং ট্রাফিক লেভেলে পানি অপসারণ ব্যবস্থা নেওয়া নাগরিক-মুভমেন্ট সচল রাখতে সহায়তা করবে। এই পর্যায়ে গণচেতনা বৃদ্ধি, নালায় আবর্জনা ফেলা বন্ধে স্থানীয় অভিযান ও জরিমানা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

মধ্যম মেয়াদে (মিড-টার্ম) খাল পুনরুদ্ধার ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক পুনর্নির্মাণ মৌলিক ভূমিকা পালন করবে। দখলকৃত খালগুলোর আইনগত উদ্ধারে প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে খাল পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং মেকানিক্যাল ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সেডিমেন্ট অপসারণ করা দরকার। ড্রেনেজ নকশা বড় করে, কালেকশন বেসিন স্থাপন করে এবং রাস্তা নির্মাণে নালী-লাইন বজায় রেখে রেইনওয়াটারকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সবুজ অবকাঠামো যেমন রেইন গার্ডেন, পার্ক ও পার্মাবল বাফার তৈরির মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠে পানি শোষণের সক্ষমতা বাড়ানো যায়; এতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরও পুনরায় পূরণ হবে।

দীর্ঘমেয়াদে (লং-টার্ম) ঢাকা জলাবদ্ধতা বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে নীতিগত ও পরিকল্পনাগত সংস্কারের দেখা প্রয়োজন। পরিকল্পিত নগরায়ন ও ভূমি ব্যবহারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন এবং খাল-বিলে বাণিজ্যিক উন্নয়ন বন্ধ করা প্রয়োজনীয়। অবকাঠামো পরিকল্পনায় ক্লাইমেট-রেসিলিয়েন্ট নকশা অন্তর্ভুক্ত করে ভবন, রাস্তা ও সেতুতে সম্ভাব্য বন্যা উচ্চতা ধরা দরকার; এ ছাড়া সামগ্রিক জল ব্যবস্থাপনার নীতি প্রণয়ন করে ঝুঁকি-ভিত্তিক অবকাঠামো বিনিয়োগ নির্ধারণ করতে হবে। আইনি কাঠামো শক্তিশালী করে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং কর্পোরেশন ও ডেভেলপারদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা গেলে পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

টেকনোলজি ও ইনোভেশন ঢাকার ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্মার্ট ড্রেনেজ সিস্টেম—রিয়েল-টাইম সেঞ্চর, অটোমেটেড পাম্পিং কন্ট্রোল এবং হাইড্রোলজিকাল মডেল—খাবার মতো জলস্তর পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে, ফলে বিপদের আগেই প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে। রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং বাড়ি ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রয়োগ করে অতিরিক্ত জলের উৎস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই সব প্রযুক্তি স্যাটেলাইট ইমেজ ও ড্রোন সার্ভে মিলিয়ে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) ভিত্তিক ঝুঁকি মানচিত্র তৈরিতে সাহায্য করবে, যাতে প্রশাসন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে টার্গেটেড পদক্ষেপ নিতে পারে।

অর্থায়ন ও অংশীদারিত্ব ছাড়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP), আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রজেক্ট-ভিত্তিক বন্ড ব্যবহার করে পুনর্গঠন ও ড্রেনেজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যেতে পারে। এগুলি বাস্তবায়নের সময় ক্ষতির আর্থিক বিশ্লেষণ দেখাতে হবে—পানি জমা না হলে ব্যবসায়িক ক্ষতি, পরিবহন ব্যয় ও স্বাস্থ্যব্যয়ের সাশ্রয় কেমন হবে—তাহলে নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ পাবে। স্থানীয় স্তরে কমিউনিটি-ভিত্তিক খাল রক্ষণাবেক্ষণ, স্বেচ্ছাসেবক ক্লিন-আপ ড্রাইভ ও নাগরিক রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম সরকার ও কর্পোরেশনের কাজকে ত্বরান্বিত করবে।

আন্তর্জাতিক অনুশীলন থেকে শিক্ষা নিয়ে ঢাকাও কার্যকর মডেল অনুসরণ করতে পারে। সিঙ্গাপুরের মতো শহরগুলো স্মার্ট ড্রেনেজ, বাফার পুকুর ও কঠোর ভূমি ব্যবস্থাপনা করে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমাতে পেরেছে; ঢাকায়ও খাল পুনরুদ্ধার, পাম্পিং স্টেশন আধুনিকায়ন ও ভৌত নকশা পরিবর্তনে গুরুত্ব দিলে দ্রুত ফল পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে নগর প্রশাসন যদি স্বচ্ছ, সময়োপযোগী ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করে—স্থানীয় জনগণ, এনজিও ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা নিয়ে—তবে টেকসই সমাধান বাস্তবায়িত হবে।

উপসংহারে বলা যায়, ঢাকা জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব কিন্তু তা একক প্রকল্পে নয়; সমন্বিত, প্রযুক্তি-সহায়িত ও নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। জরুরি পরিষ্কারকরণ ও পাম্পিং থেকে শুরু করে খাল পুনরুদ্ধার, স্মার্ট ড্রেনেজ ও পরিকল্পিত নগরায়ন—সবকিছু মিলিয়ে যদি নির্দিষ্ট সময়সীমা ও অর্থায়ন নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়, ঢাকা দ্রুতই জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় সফল শহরে পরিণত হতে পারে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত