বর্তমান যুগে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি নতুন কিছু ঝুঁকিও সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে হেডফোন অন্যতম। পড়াশোনা, অফিসের কাজ, গান শোনা, সিনেমা দেখা বা গেম খেলা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই হেডফোন ব্যবহার এখন দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম হেডফোন ছাড়া একটি দিন কল্পনা করতেও পারে না। কিন্তু হেডফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন না হলে তা আমাদের কানে, মস্তিষ্কে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই হেডফোন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানা ও তা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
হেডফোন ব্যবহারে সতর্কতা কেন জরুরি
আমাদের কানের ভেতরের অংশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। উচ্চ শব্দ দীর্ঘসময় ধরে কানে প্রবেশ করলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ভলিউমে দীর্ঘসময় হেডফোন ব্যবহারের কারণে স্থায়ী শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, হেডফোন ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া জমে কানে সংক্রমণ হতে পারে। আবার, দীর্ঘসময় কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখলে মাথাব্যথা, মানসিক চাপ এমনকি ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই সচেতনভাবে ও নিয়ম মেনে হেডফোন ব্যবহার না করলে এর সুবিধার চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে।
ভলিউম নিয়ন্ত্রণ: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
হেডফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো ভলিউম নিয়ন্ত্রণ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরামর্শ অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা কখনোই ৬০% এর বেশি রাখা উচিত নয়। অনেকেই গান শোনার সময় বা ভিডিও দেখার সময় ভলিউম সর্বোচ্চ করে দেন, যা কানের পর্দায় চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভ্যাসে কানে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই ভলিউম সর্বদা মাঝারি পর্যায়ে রাখতে হবে এবং আশেপাশের পরিবেশে শব্দ শোনা যাচ্ছে কি না, সেটিও খেয়াল করতে হবে। যদি পাশের মানুষ আপনার হেডফোন থেকে শব্দ শুনতে পায়, তাহলে বুঝতে হবে ভলিউম অনেক বেশি।
সময়ের সীমা মেনে চলা
ভলিউম কম রাখার পাশাপাশি হেডফোন ব্যবহারের সময়ও সীমিত রাখা উচিত। সাধারণত একটানা ৬০ মিনিটের বেশি হেডফোন ব্যবহার না করা ভালো। এক ঘণ্টা ব্যবহার করার পর অন্তত ১০ মিনিট বিরতি নেওয়া উচিত। দীর্ঘসময় কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখলে কান ক্লান্ত হয়ে যায় এবং কানের ভেতরে রক্তসঞ্চালনে সমস্যা হয়। নিয়মিত বিরতি দিলে কানের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে এবং শ্রবণশক্তি দীর্ঘসময় ধরে ভালো থাকে।
সঠিক হেডফোন নির্বাচন
বাজারে নানা ধরনের হেডফোন পাওয়া যায়—ইয়ারফোন, হেডফোন, ওয়্যারলেস ইয়ারবাড ইত্যাদি। তবে সব ধরনের হেডফোনই সমান নিরাপদ নয়। সাধারণত ওভার-ইয়ার হেডফোন কানের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ, কারণ এতে শব্দ কানে সরাসরি প্রবেশ করে না। ইয়ারফোন বা ইয়ারবাড কানের ভেতরে ঢুকে শব্দকে সরাসরি কানের পর্দায় পৌঁছে দেয়, যা বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই যারা নিয়মিত গান শোনেন বা দীর্ঘসময় হেডফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য ওভার-ইয়ার হেডফোন ব্যবহার করা উত্তম।