প্রাচীনকাল থেকেই রসুনকে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতেই নয়, রসুনের স্বাস্থ্যগুণ মানুষের দেহে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রসুন খেলে হৃদরোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পর্যন্ত অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ কারণেই রসুনকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন অল্প পরিমাণ রসুন খাওয়ার অভ্যাস শরীরে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি-
রসুনে রয়েছে প্রচুর সালফার যৌগ, অ্যালিসিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। নিয়মিত রসুন খেলে সর্দি-কাশি ও ফ্লু-এর মতো সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বিশেষ করে মৌসুমি রোগ প্রতিরোধে রসুন কার্যকর ভূমিকা রাখে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়-
বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রসুন খান, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
হজমশক্তি উন্নত করে-
রসুন হজমতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা উপাদানগুলো পাকস্থলীতে খাবার ভাঙতে সাহায্য করে এবং গ্যাস, অম্বল কিংবা বদহজমের সমস্যা দূর করে। নিয়মিত রসুন খেলে অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যায়।
শরীরে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে-
রসুন শরীর থেকে টক্সিন বা ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। লিভারকে সক্রিয় রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা নিয়মিত রসুন খান, তাদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল কার্যকারিতা-
রসুনকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয় কারণ এটি জীবাণু নাশে অত্যন্ত কার্যকর। ত্বকের ইনফেকশন, দাঁতের ব্যথা কিংবা ফাঙ্গাসজনিত সমস্যায় রসুন ভেষজ ওষুধের মতো কাজ করে। এমনকি প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে ক্ষত সারাতেও রসুন ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারিতা-
রসুনে থাকা সালফার যৌগ ও ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ব্রণ প্রতিরোধ করে। নিয়মিত রসুন খেলে ত্বক মসৃণ হয় এবং অকালেই বলিরেখা পড়া কমে। এছাড়া রসুন চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক-
রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রসুন একটি উপকারী খাদ্য। নিয়মিত খেলে ইনসুলিন কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা-
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনে থাকা অ্যালিসিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পাকস্থলী, বৃহদান্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসে রসুনের কার্যকারিতা রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ-
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন কাঁচা রসুনের ২-৩ কোয়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে খালি পেটে খেলে বেশি কার্যকর হয়। তবে অতিরিক্ত রসুন খেলে পেটের সমস্যা, গ্যাস বা মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।