ঘুম মানুষের শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য একটি চাহিদা। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সতেজ রাখে, মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু আধুনিক ব্যস্ত জীবনে অনেকেই অভ্যাস করে ফেলেছেন গভীর রাতে ঘুমানোর, কিংবা দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া। নিয়মিতভাবে গভীর রাতে ঘুমানোর ফলে শরীরের ভেতরে তৈরি হতে পারে নানান ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গভীর রাতে ঘুমানোর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব।
১. ঘুমের মান নষ্ট হয়
যখন কেউ গভীর রাতে ঘুমাতে যায়, তখন স্বাভাবিক ঘুমের সময়সূচি বিঘ্নিত হয়। শরীরের জৈবঘড়ি বা বায়োলজিক্যাল ক্লক রাতের বেলা বিশ্রামের জন্য তৈরি। কিন্তু দেরিতে ঘুমালে শরীর পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে পারে না, ফলে ঘুমের মান নষ্ট হয় এবং পরের দিন ক্লান্তি অনুভূত হয়।
২. হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়
শরীরের বিভিন্ন হরমোন যেমন কর্টিসল, মেলাটোনিন ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময়ে নিঃসৃত হয়। গভীর রাতে ঘুমালে বা দেরি করে শোয়ার কারণে এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মানসিক চাপ, অবসাদ, ওজন বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে সহজেই সর্দি-কাশি, জ্বরসহ নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে শরীর নানা জটিল রোগে ভুগতে পারে।
৪. মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে
গভীর রাতে ঘুমানোর অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দেরি করে ঘুমান তারা তুলনামূলক বেশি স্ট্রেস, উদ্বেগ ও ডিপ্রেশনে ভোগেন। একই সঙ্গে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
৫. স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে
রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া এবং পরের দিন দেরি করে উঠার কারণে শরীরের বিপাকক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া অনিয়মিত ঘুমের কারণে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. হার্টের সমস্যার সম্ভাবনা
অল্প ঘুমানো বা গভীর রাতে ঘুমানোর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৭. কাজের দক্ষতা কমে যায়
গভীর রাতে ঘুমালে দিনের বেলায় কাজের প্রতি মনোযোগ থাকে না। বারবার ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব এবং অমনোযোগিতা দেখা দেয়। ফলে কর্মক্ষেত্র বা পড়াশোনায় দক্ষতা নষ্ট হয়।
৮. ত্বকের ওপর প্রভাব
রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল থাকে না। ডার্ক সার্কেল, ব্রণ বা ত্বকের রুক্ষভাব দেখা দেয়। এজন্য সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে নিয়মিত ঘুমানো জরুরি।
গভীর রাতে ঘুমানোর অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্তন করা উচিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠার অভ্যাস শরীর ও মনের জন্য ভালো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। নিয়মিত সময় মেনে ঘুমালে শরীর যেমন সতেজ থাকে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের জটিল রোগ থেকেও মুক্ত থাকা যায়।