স্বাস্থ্য সচেতন /

বয়লারের ডিম মানবদেহের জন্য কতটা নিরাপদ

অতিথি লেখক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
বয়লারের ডিম মানবদেহের জন্য কতটা নিরাপদ
বয়লারের ডিম কতটা নিরাপদ মানবদেহের জন্য

বর্তমান সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিয়ে মানুষের সচেতনতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে যে খাবারগুলো প্রতিদিনের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় থাকে, সেগুলোর গুণাগুণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিম এমন এক খাদ্য উপাদান যা বিশ্বজুড়ে মানুষের অন্যতম প্রধান প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ডিম দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার অংশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তথাকথিত “বয়লারের ডিম”, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এই ডিম আসলেই কতটা নিরাপদ মানবদেহের জন্য।

বয়লারের ডিম কী-

বয়লার মুরগি মূলত মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে খামারে পালন করা হয়। এ ধরনের মুরগি দ্রুত বাড়ে এবং অল্প সময়ে বাজারজাত করা যায়। যদিও বয়লার মুরগি সাধারণত মাংসের জন্য খ্যাত, কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের মুরগি থেকেও ডিম পাওয়া যায়। এই ডিমই বাজারে পরিচিত “বয়লারের ডিম” নামে। সাধারণ দেশি বা লেয়ার মুরগির ডিমের তুলনায় বয়লারের ডিম সাধারণত সস্তা হয়, তবে এর নিরাপত্তা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে।

পুষ্টিগুণের দিক থেকে বয়লারের ডিম-

পুষ্টিবিদরা জানান, বয়লারের ডিমেও ডিমের মূল পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, খনিজ উপাদান (আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম) উপস্থিত থাকে। তবে লেয়ার বা দেশি মুরগির ডিমের তুলনায় এর পুষ্টিমান তুলনামূলক কম বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে দেশি ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বেশি থাকে।

বয়লারের ডিম নিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক-

অনেক গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, বয়লার মুরগি অল্প সময়ে বড় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব প্রভাব যদি ডিমে থেকে যায়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

হরমোনাল সমস্যা: অতিরিক্ত হরমোনের অবশিষ্টাংশ মানবদেহে প্রবেশ করলে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: মুরগিকে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যানসারের ঝুঁকি: দীর্ঘদিন কেমিক্যালযুক্ত খাবার খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে কিছু গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে।

পরিপাকজনিত সমস্যা: নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হলে মুরগির ডিমে এমন উপাদান থাকতে পারে যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত-

ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের খাদ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, সব বয়লারের ডিম যে ক্ষতিকর তা নয়। তবে যেসব খামারে মানহীন খাদ্য, অতিরিক্ত ওষুধ বা অবৈধ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেসব মুরগির ডিম খেলে মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে সঠিক নিয়মে পালন করা মুরগির ডিম খেলে তেমন কোনো বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

ভোক্তাদের জন্য পরামর্শ-

বয়লারের ডিম খাওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:

বিশ্বস্ত উৎস থেকে কিনুন – পরিচিত দোকান বা অনুমোদিত খামারের ডিম কিনতে হবে।

ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করুন – কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

খাদ্যে বৈচিত্র্য রাখুন – শুধু বয়লারের ডিম নয়, সম্ভব হলে দেশি বা লেয়ার মুরগির ডিম খাদ্যতালিকায় রাখা ভালো।

সন্তান ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সতর্কতা – শিশু ও প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের জন্য নিরাপদ ডিম নির্বাচন করা জরুরি।

বয়লারের ডিম বনাম দেশি ডিম-

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশি ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। এছাড়া দেশি মুরগির ডিম সাধারণত রাসায়নিকের প্রভাবমুক্ত থাকে। ফলে যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তাদের কাছে দেশি ডিম বয়লারের ডিমের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়। তবে দাম কম হওয়ায় এবং সহজলভ্যতার কারণে অনেকেই বয়লারের ডিম কিনতে বাধ্য হন।

সবশেষে বলা যায়, বয়লারের ডিম মানবদেহের জন্য পুরোপুরি ক্ষতিকর নয়, তবে এর নিরাপত্তা নির্ভর করে খামারের খাদ্য ও পরিচর্যার মানের ওপর। সঠিক নিয়মে উৎপাদিত বয়লারের ডিম খেলে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু অবহেলাপূর্ণভাবে পালন করা মুরগির ডিম খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ভোক্তাদের সচেতন থাকতে হবে এবং সম্ভব হলে দেশি বা লেয়ার ডিমের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বয়লারের ডিম মানবদেহের জন্য কতটা নিরাপদ

বয়লারের ডিম মানবদেহের জন্য কতটা নিরাপদ
বয়লারের ডিম কতটা নিরাপদ মানবদেহের জন্য

বর্তমান সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিয়ে মানুষের সচেতনতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে যে খাবারগুলো প্রতিদিনের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় থাকে, সেগুলোর গুণাগুণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিম এমন এক খাদ্য উপাদান যা বিশ্বজুড়ে মানুষের অন্যতম প্রধান প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ডিম দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার অংশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তথাকথিত “বয়লারের ডিম”, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এই ডিম আসলেই কতটা নিরাপদ মানবদেহের জন্য।

বয়লারের ডিম কী-

বয়লার মুরগি মূলত মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে খামারে পালন করা হয়। এ ধরনের মুরগি দ্রুত বাড়ে এবং অল্প সময়ে বাজারজাত করা যায়। যদিও বয়লার মুরগি সাধারণত মাংসের জন্য খ্যাত, কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের মুরগি থেকেও ডিম পাওয়া যায়। এই ডিমই বাজারে পরিচিত “বয়লারের ডিম” নামে। সাধারণ দেশি বা লেয়ার মুরগির ডিমের তুলনায় বয়লারের ডিম সাধারণত সস্তা হয়, তবে এর নিরাপত্তা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে।

পুষ্টিগুণের দিক থেকে বয়লারের ডিম-

পুষ্টিবিদরা জানান, বয়লারের ডিমেও ডিমের মূল পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, খনিজ উপাদান (আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম) উপস্থিত থাকে। তবে লেয়ার বা দেশি মুরগির ডিমের তুলনায় এর পুষ্টিমান তুলনামূলক কম বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে দেশি ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বেশি থাকে।

বয়লারের ডিম নিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক-

অনেক গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, বয়লার মুরগি অল্প সময়ে বড় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব প্রভাব যদি ডিমে থেকে যায়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

হরমোনাল সমস্যা: অতিরিক্ত হরমোনের অবশিষ্টাংশ মানবদেহে প্রবেশ করলে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: মুরগিকে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যানসারের ঝুঁকি: দীর্ঘদিন কেমিক্যালযুক্ত খাবার খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে কিছু গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে।

পরিপাকজনিত সমস্যা: নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হলে মুরগির ডিমে এমন উপাদান থাকতে পারে যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত-

ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের খাদ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, সব বয়লারের ডিম যে ক্ষতিকর তা নয়। তবে যেসব খামারে মানহীন খাদ্য, অতিরিক্ত ওষুধ বা অবৈধ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেসব মুরগির ডিম খেলে মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে সঠিক নিয়মে পালন করা মুরগির ডিম খেলে তেমন কোনো বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

ভোক্তাদের জন্য পরামর্শ-

বয়লারের ডিম খাওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:

বিশ্বস্ত উৎস থেকে কিনুন – পরিচিত দোকান বা অনুমোদিত খামারের ডিম কিনতে হবে।

ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করুন – কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

খাদ্যে বৈচিত্র্য রাখুন – শুধু বয়লারের ডিম নয়, সম্ভব হলে দেশি বা লেয়ার মুরগির ডিম খাদ্যতালিকায় রাখা ভালো।

সন্তান ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সতর্কতা – শিশু ও প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের জন্য নিরাপদ ডিম নির্বাচন করা জরুরি।

বয়লারের ডিম বনাম দেশি ডিম-

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশি ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। এছাড়া দেশি মুরগির ডিম সাধারণত রাসায়নিকের প্রভাবমুক্ত থাকে। ফলে যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তাদের কাছে দেশি ডিম বয়লারের ডিমের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়। তবে দাম কম হওয়ায় এবং সহজলভ্যতার কারণে অনেকেই বয়লারের ডিম কিনতে বাধ্য হন।

সবশেষে বলা যায়, বয়লারের ডিম মানবদেহের জন্য পুরোপুরি ক্ষতিকর নয়, তবে এর নিরাপত্তা নির্ভর করে খামারের খাদ্য ও পরিচর্যার মানের ওপর। সঠিক নিয়মে উৎপাদিত বয়লারের ডিম খেলে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু অবহেলাপূর্ণভাবে পালন করা মুরগির ডিম খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ভোক্তাদের সচেতন থাকতে হবে এবং সম্ভব হলে দেশি বা লেয়ার ডিমের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত