বর্তমান সময়ে সৌন্দর্যচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ত্বকের যত্নে বরফের ব্যবহার এখন একটি সাধারণ ও কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রসাধনীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বককে সুস্থ, উজ্জ্বল এবং সতেজ রাখতে অনেকেই বরফকে বেছে নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা বরফের গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এটি প্রমাণিত যে বরফ শুধু ত্বকের সতেজতাই ফিরিয়ে আনে না, বরং ত্বককে নানা সমস্যার হাত থেকেও সুরক্ষা দেয়। তাই অনেকেই প্রতিদিনের সৌন্দর্য রুটিনে বরফকে যুক্ত করছেন।
ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে-
বরফের সবচেয়ে বড় উপকার হলো এটি ত্বককে সঙ্গে সঙ্গে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। দিনের পর দিন কাজের চাপে বা বাইরে রোদে থাকার কারণে ত্বক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেই ক্লান্তি কাটাতে মুখে বরফ ঘষলে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা রাতে বাইরে থেকে এসে মুখে বরফ ঘষলে ত্বকের সতেজতা অনেকটাই ফিরে আসে।
ব্রণ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে-
যাদের ব্রণ বা ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য বরফ হতে পারে একটি কার্যকরী সমাধান। বরফ ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে দেয় এবং ব্রণের লালচে ভাব ও ফোলাভাব হ্রাস করে। অনেক সময় হঠাৎ করে ব্রণ বের হলে তা ব্যথা সৃষ্টি করে। সেই জায়গায় বরফ চেপে ধরলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। চিকিৎসকরা অনেক সময় পরামর্শ দেন, ব্রণ চেপে না ধরার পাশাপাশি বরফ ব্যবহার করার, কারণ এতে ব্রণ দ্রুত শুকিয়ে যায়।
চোখের ফোলা ও ডার্ক সার্কেল কমায়-
আধুনিক ব্যস্ত জীবনে অনেকেরই চোখের নিচে ফোলা ভাব বা ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দেখা দেয়। রাত জাগা, ঘুমের অভাব কিংবা মানসিক চাপের কারণে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। নিয়মিত চোখের নিচে বরফ মালিশ করলে ফোলা ভাব অনেকটাই কমে যায়। বরফের ঠান্ডা প্রভাব রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, ফলে ডার্ক সার্কেলের দৃশ্যমানতা হ্রাস পায় এবং চোখ সতেজ দেখায়।
ত্বকের রোমকূপ সংকুচিত করে-
ত্বকের রোমকূপ বড় হয়ে গেলে ত্বক দেখতে খসখসে হয়ে যায় এবং ময়লা সহজেই জমে ব্রণ বা ব্ল্যাকহেডস তৈরি হয়। বরফের আরেকটি বড় উপকার হলো এটি রোমকূপ সংকুচিত করে। ফলে ত্বক মসৃণ হয় এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমে যায়। প্রতিদিন মেকআপ করার আগে মুখে বরফ ঘষলে মেকআপ অনেক সময় ধরে ঠিক থাকে এবং রোমকূপ বন্ধ হয়ে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়-
সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে ত্বকে রোদে পোড়া দাগ তৈরি হয়। সেই দাগ কমাতে বরফ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বরফের ঠান্ডা স্পর্শ ত্বককে শীতল করে এবং লালচে ভাব কমায়। নিয়মিত বরফ ব্যবহার করলে ত্বক রোদে পোড়ার ক্ষতি থেকে অনেকটা সুরক্ষা পায়।
বয়সের ছাপ দূরে রাখতে সহায়ক-
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। তবে ত্বকে নিয়মিত বরফ ব্যবহার করলে তা বয়সের ছাপ অনেকটা কমিয়ে আনে। বরফ রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ফলে ত্বকের কোষ নতুনভাবে গঠিত হয় এবং ত্বক টানটান থাকে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বককে দীর্ঘদিন তরুণ রাখতে সহায়তা করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে-
ত্বক ফর্সা করার কোনো যাদুকরী উপাদান না হলেও বরফ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এটি ত্বকের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় দেখায়। অনেক সময় ঘরোয়া পদ্ধতিতে লেবুর রস বা সবুজ চায়ের বরফ কিউব তৈরি করে ব্যবহার করা হয়, যা আরও বেশি কার্যকর।
কীভাবে ব্যবহার করবেন-
বরফ সরাসরি বরফ লাগানো উচিত নয়। বরফকে সবসময় একটি পাতলা কাপড়ে মুড়ে ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে, নাহলে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ২ থেকে ৩ মিনিট মুখে বরফ মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। চোখের চারপাশে ব্যবহার করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে।
ত্বকের যত্নে বরফ একটি সহজলভ্য, প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপাদান। এটি শুধু ক্লান্তি ও ফোলা ভাব দূর করে না, বরং ব্রণ, রোদে পোড়া, ডার্ক সার্কেল ও রোমকূপের সমস্যাও সমাধান করে। নিয়মিত বরফ ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ, উজ্জ্বল ও টানটান। তাই ব্যয়বহুল প্রসাধনীর পরিবর্তে প্রতিদিনের সৌন্দর্যচর্চায় বরফকে স্থান দিলে ত্বকের জন্য তা হতে পারে একটি নিখুঁত সমাধান।