গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর একটি, যখন তার খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময়ে প্রতিটি খাবারের প্রভাব শুধু মায়ের উপর নয়, বরং শিশুর স্বাস্থ্য এবং বিকাশের উপরও প্রভাব ফেলে। ফলমূল, বিশেষ করে কলা, গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে সম্প্রতি কাঁচা কলা খাওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন—“গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়া কি নিরাপদ?”।
কলা হল একটি পুষ্টিকর ফল, যা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এই পুষ্টিগুণ গর্ভাবস্থায় দেহের পানি-সাল্ট ব্যালান্স বজায় রাখতে, স্নায়ু ও মাংসপেশি সুস্থ রাখতে, হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করতে এবং সামগ্রিক শক্তি যোগাতে সহায়ক। বিশেষ করে পটাসিয়াম গর্ভকালীন দেহে অস্বাভাবিক পেশী সংকোচন, উচ্চ রক্তচাপ এবং নার্ভ ফাংশন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে কাঁচা কলার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা আছে। কাঁচা কলায় আংশিকভাবে অপরিপক্ব স্টার্চ থাকে, যা হজমের জন্য একটু কঠিন হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে খুব বেশি কাঁচা কলা খেলে কিছু মহিলার জন্য পেটে গ্যাস, অম্বল বা হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে বা রক্তে শর্করার সমস্যা রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত কাঁচা কলা খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এতে গ্লুকোজ সরাসরি রক্তে যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া নিরাপদ যদি তা পরিমাণমতো এবং সঠিকভাবে খাওয়া হয়। হালকা পাকা কলা খাওয়া সবচেয়ে ভালো, কারণ এতে হজম সহজ হয় এবং পুষ্টিগুণও কার্যকরভাবে শরীরে جذب হয়। দৈনিক ১–২টি কলা খাওয়াই সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। অতিরিক্ত কাঁচা কলা খাওয়া হলে তা হজম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তি বাড়াতে পারে।
পুষ্টিবিদরা আরও পরামর্শ দেন যে, কলা খাওয়ার সময় এটি অন্যান্য হালকা খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত। যেমন দুধ বা বাদামের সঙ্গে কলা খেলে পুষ্টিগুণ আরও কার্যকরভাবে শোষিত হয় এবং হজমেও সমস্যা কম হয়। এছাড়াও, খাওয়ার আগে কলা ধুয়ে নিতে হবে এবং সম্ভব হলে হালকা পাকা অবস্থায় খাওয়া উচিত।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় কলা মোটামুটি নিরাপদ এবং পুষ্টিকর। তবে কাঁচা কলা অতিরিক্ত খাওয়া কিছু মহিলার জন্য হজম সমস্যা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা পাকা কলা খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর। গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন ১–২টি কলা খেয়ে সহজেই পুষ্টি এবং শক্তি পেতে পারেন, তবে খাওয়ার সময় অতিরিক্ত না খাওয়া এবং শরীরের প্রতিক্রিয়া খেয়াল রাখা জরুরি।