কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে আবারও গোলাগুলি ও মর্টার শেলের আওয়াজ ভেসে আসছে। মুহুর্মুহু গোলাগুলির শব্দে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলি বিকট শব্দ ভেসে আসে। টেকনাফের সাবারাংয়ের নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা ভারী গোলা শব্দের কথাও জানিয়েছেন।
গেল কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তার বিরুদ্ধে লড়ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর পর থেকেই সেখানে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কয়েক দিন পর পরই সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশে ভেসে আসছে গোলাগুলির শব্দ।
স্থানীয়দের বরাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের যুদ্ধ জাহাজ ভিড়েছে। জাহাজটি রাতেও মৌলভীপাড়া সীমান্তের ওপারে দেখা গেছে। এরপর রাত থেকে শুরু হয় মর্টারশেলের বিকট শব্দ। শাহপরীর দ্বীপে রাতভর গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা জসিম মাহামুদ বলেন, “মিয়ানমারের সংঘাত হওয়ার পর থেকে এমন বিস্ফোরণের শব্দ আর পাওয়া যায়নি। আজকের আওয়াজগুলো খুবই মারাত্মক, কোনোভাবে রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না।”
বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় শাহপরীর দ্বীপের প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের দেখা মেলে। এসময় অনেকেই আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন।
শাহীন আলম নামে দ্বীপের এক বাসিন্দা বলেন, “গোলার বিকট শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি। এত বিকট শব্দ আসছে কোনোভাবে ঘুমানো যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে খুব ভয়ে ছিলাম। যদি গোলা এপারে এসে পড়ে তাহলে কী হবে?”
শাহপরীর দ্বীপের বসবাসকারী আব্দুর রহমান বলেন, “গোলার শব্দ শাহপরীর দ্বীপ বাজারে পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এতে সীমান্তের বসবাসকারী শিশু-নারীরা ভয়ভীতির মধ্য আছেন।”
দ্বীপের জেটিঘাটের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, “মিয়ানমারের ওপার থেকে খুব বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ আবার এ সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি এ গোলার শব্দ এপারে মাটি কাঁপছে।”
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুস বলেন, “রাতে খুব বেশি গুলির শব্দ শোনা গেছে। গোলার শব্দ পেলেও ঠিক ওপারে কোন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু এত বেশি শব্দের বিকট আওয়াজ ছিল যে অনেকে রাতে ঘুমাতে পারেনি।”
সীমান্তে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, “মিয়ানমারে ফের সংঘর্ষ এপারের মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। আমরা জেনেছি, ওপারে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে, ফলে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে- তাই সীমান্তরক্ষীরা সর্তক অবস্থানে রয়েছে।”
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সর্তক অবস্থানে রয়েছি।”