অ্যান্টার্কটিকা—পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল, শুষ্ক ও নির্জন মহাদেশ। বছরের প্রায় পুরো সময় বরফে ঢাকা থাকে এই মহাদেশ। কিন্তু সেই বরফের নিচে লুকিয়ে আছে এক বিস্ময়কর রহস্য। বিজ্ঞানীরা সেখানে খুঁজে পেয়েছেন শত শত হ্রদ, যেগুলো বরফস্তরের নিচে হাজার হাজার বছর ধরে লুকানো ছিল।
কতগুলো হ্রদ আছে?
বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ গবেষণা অনুযায়ী, অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে এখন পর্যন্ত ৪০০টিরও বেশি হ্রদ পাওয়া গেছে। এগুলোকে বলা হয় Subglacial Lakes।
সবচেয়ে বড় হ্রদ – Lake Vostok
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো Lake Vostok, যা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার লম্বা এবং ৫০ কিলোমিটার চওড়া। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ লুকানো হ্রদ। ধারণা করা হয়, প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বছর ধরে এই হ্রদ বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জীবনের রহস্য
বিজ্ঞানীরা যখন এসব হ্রদে গবেষণা শুরু করেন, তখন তারা অবাক হয়ে দেখেন—বরফে ঢাকা অন্ধকার পরিবেশেও জীবাণু বা মাইক্রোবের অস্তিত্ব আছে। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে সংগৃহীত নমুনায় পাওয়া গেছে অজানা প্রজাতির মাইক্রোব, যাদের সম্পর্কে আগে বিজ্ঞানীরা কিছুই জানতেন না।
এটা প্রমাণ করে যে, পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন পরিবেশেও জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব। এমনকি যেসব গ্রহ বা উপগ্রহে বরফের নিচে পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে—যেমন বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপা বা শনি গ্রহের উপগ্রহ এনসেলাডাস—সেখানে জীবন থাকতে পারে, এ ধারণাকেও জোরালো করছে এই আবিষ্কার।
গবেষণার চ্যালেঞ্জ
অ্যান্টার্কটিকার এই হ্রদগুলো গবেষণা করা খুবই কঠিন। বরফস্তরের পুরুত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত। বরফ ভেদ করে হ্রদ পর্যন্ত পৌঁছাতে বিশেষ ড্রিল মেশিন ব্যবহার করতে হয়। আবার গবেষকদের সবসময় সতর্ক থাকতে হয়, যেন বাইরের কোনো জীবাণু গিয়ে এসব প্রাচীন হ্রদকে দূষিত না করে ফেলে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই হ্রদগুলো থেকে পাওয়া তথ্য শুধু পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য নয়, বরং মহাকাশে জীবনের খোঁজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই এসব লুকানো হ্রদ আজ পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত বৈজ্ঞানিক রহস্যগুলোর একটি।