ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা এবং প্রকৃত অর্থেই এটি শান্তির ধর্ম। “ইসলাম” শব্দের মূল অর্থই শান্তি, আত্মসমর্পণ ও নিরাপত্তা। কিন্তু সমাজে অনেক সময় কিছু ভুল প্রথা, অনৈক্য ও অপব্যবহারের কারণে ইসলামের এই সৌন্দর্য বিকৃত হয়ে যায়। এমনকি মৃত্যুর পর কবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা বিতর্ক ও অনৈক্য দেখা যায়।
ইসলামী শরিয়তে মূল নীতি হলো, প্রত্যেক মৃতদেহকে পৃথক কবর দেওয়া। কারণ এটি মর্যাদার দাবি এবং মৃতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ। তবে যুদ্ধ, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন বহু মানুষ একসঙ্গে মৃত্যুবরণ করে এবং স্থান বা লোকবলের অভাব দেখা দেয়, তখন এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করা বৈধ (জায়েজ) বলে শরিয়ত অনুমতি দিয়েছে। নবী করিম (সা.) উহুদ যুদ্ধের দিনে এক কবরে একাধিক শহীদকে দাফন করেছিলেন (সহিহ বুখারি, হাদীস: ১৩৪৩)।
হিশাম ইবনু আমের (রা.) বলেন, আমরা উহুদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক শহীদের জন্য পৃথক পৃথক কবর খনন করা কষ্টসাধ্য। তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে গভীর কর এবং দু’জন বা তিনজনকে এক এক কবরে দাফন কর। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে কুরআন বেশি জানে তাকে প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন (নাসাঈ হা/২০১০; ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০; মিশকাত হা/১৭০৩)।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় এক কবরে একাধিক মৃতদেহ দাফন করা অনুচিত। তবে স্থান সংকুলান না হলে বা প্রয়োজন দেখা দিলে তা বৈধ (আল-মাজমূ‘, ৫/২৪৭)। শাইখ ইবনু উছাইমীন (রহ.) বলেন, মহামারি বা দুর্যোগে একাধিক কবর খনন করার সুযোগ না থাকলে এক কবরে একাধিক লাশ রাখা জায়েজ (আশ-শারহুল মুমতে‘, ৫/৩৬৯)।
এই ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, লাশগুলো পাশাপাশি রাখা হবে এবং প্রতিটি লাশকে মাটি দিয়ে অন্যটি থেকে আড়াল করতে হবে। একটি লাশের ওপর আরেকটি লাশ রাখা ঠিক নয়।
পুরোনো কবরের ওপর নতুন কবর দেওয়ার বিধান হলো, কবরস্থানে নতুন কবরের জন্য খালি জায়গা না থাকলে সবচেয়ে পুরোনো যে কবরে মৃতদেহ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হবে, তাতে নতুন কবর দেওয়া যাবে। কিন্তু যদি নতুন কবরের চিহ্ন থাকে এবং মৃতদেহ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা না হয়, তবে সেখানে নতুন করে কবর দেওয়া বৈধ নয়, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া।
যদি কবরস্থান সংস্কারের সময় নতুন ও পুরোনো কবর আলাদা করা না যায়, তাহলে যেখানে নতুন কবর থাকার সম্ভাবনা কম সেখানে কবর খোঁড়া উচিত। কবর খনন করতে গিয়ে আগের মৃতদেহের হাড় ইত্যাদি পাওয়া গেলে সেগুলো একত্র করে এক পাশে বা ভিন্ন স্থানে দাফন করে দেওয়া উচিত।
স্বাভাবিক অবস্থায় একটি কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা অনুচিত হলেও, স্থান সংকুলান না হলে বা মহামারির কারণে একাধিক কবর খনন করার মতো লোক পাওয়া না গেলে কেবল তখনই এক কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে। উহুদ যুদ্ধের দিনও রাসুলুল্লাহ (সা.) এই নির্দেশই দিয়েছিলেন, এবং যিনি কুরআন বেশি জানতেন, তাঁকে আগে রাখা হয়েছিল।
ইসলাম প্রতিটি মানুষকে জীবিত অবস্থায় যেমন সম্মান দিয়েছে, তেমনি মৃত্যুর পরও তার মর্যাদা রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। তাই কবর খনন, দাফন ও মৃতদেহ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামী নীতি ও আদব মেনে চলাই একজন মুসলমানের কর্তব্য।