জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যই এ অনিশ্চয়তার মূল কারণ বলে জানা গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর আগে কমিশনের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এর চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। কমিশন নিজস্ব সুপারিশ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সব রাজনৈতিক দল গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হলেও, ভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। কয়েকটি দল সনদে সইয়ের আগে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, ‘সংবিধান আদেশ’ জারি না করা হলে তারা সনদে সই করবে না। দলটির দাবি, জুলাই ঘোষণাপত্রের সময় ছাড় দেওয়া হয়েছিল, এবার আর সে সুযোগ নেই। তারা সংবিধান সংস্কার ও নতুন আলোচনার দাবি তুলেছে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। দলটির এক শীর্ষ নেতা জানান, খসড়া হাতে পেয়েছেন; যদি কোনো অসংগতি থাকে তা জানানো হবে। একই সঙ্গে তিনি সনদ ঘিরে ‘বিভিন্ন পক্ষের অপতৎপরতার’ অভিযোগ করেছেন।
বামপন্থী কয়েকটি দলও সনদে স্বাক্ষর না করার ইঙ্গিত দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি সনদের অঙ্গীকার অংশে একটি নতুন ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল, যা কমিশন গ্রহণ করেনি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করে কমিশন। ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ নেয়া হয়। গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে নীতিগত সম্মতি থাকলেও ভোটের সময়, কাঠামো ও প্রশ্নপত্র নিয়ে বিরোধ রয়ে গেছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অবস্থান একে অপরের থেকে ভিন্ন।
ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠকে দলগুলো সনদে সই করবে কি না, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রয়োজনে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি নিউজ।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজকের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই অনেক বিষয় স্পষ্ট হতে পারে।”
