আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে হবে—যাতে এটি পুরো জাতির জন্য একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। এমন নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শনিবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘রোড টু কপ-৩০: হাউ ক্যান ন্যাশনাল ইন্টারেস্টস বি অ্যালাইন্ড উইথ গ্লোবাল ক্লাইমেট গোলস’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘এ ওয়ার্ল্ড বিয়ন্ড ক্রাইসিস: ক্লাইমেট সলিউশনস দ্যাট ওয়ার্ক।’
উপদেষ্টা বলেন, “নির্গমন কমানো মানে শুধু উৎপাদন নয়, দায়িত্বশীল ভোগও নিশ্চিত করা।” তিনি সব খাতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কর্মকৌশল গ্রহণের ওপর জোর দেন।
রিজওয়ানা হাসান জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবুজ অফিস ভবন নির্মাণ করছে এবং জ্বালানি দক্ষ, পরিবেশবান্ধব স্থাপনার মডেল তৈরি করছে।
জলবায়ু অর্থায়নের দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দ্বৈত হিসাব ও দুর্বল বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে এবং অভিযোজন সহায়তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। প্রধান অর্থনীতিগুলোর নির্গমন যদি বাড়তেই থাকে, তবে শুধু প্রযুক্তি হস্তান্তর কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।”
তিনি জানান, নবগঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি)-এর অধীনে চারটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে, যেখানে সিভিল সোসাইটি ও অ্যাকাডেমিয়ার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—যাতে তারা কারিগরি ও নীতিগত সহায়তা দিতে পারেন।
ইটভাটার পরিবেশগত ক্ষতির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, বিকল্প নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে, যা কার্বন নিঃসরণ কমাবে, কৃষিজমি রক্ষা করবে এবং পাহাড় কাটার প্রবণতা হ্রাস করবে। তিনি পরামর্শ দেন, উর্বর মাটির পরিবর্তে নদী খননের পলি ব্যবহার করে ইট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
অভিযোজন পদক্ষেপে গুরুত্ব দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “উপকূলীয় বনায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও স্বল্পব্যয়ী লবণাক্ততা অপসারণ প্রযুক্তি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের সহনশীলতা বাড়াতে অপরিহার্য।”
তিনি উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানান, স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত সমাধান বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়াতে হবে।