নড়াইলের কালিয়ায় বর্ষাকালীন হাইব্রিড জাতের অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান চাষিরা। তাদের সফলতা দেখে অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। কৃষি বিভাগও হাইব্রিড জাতের তরমুজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শ, বিনামূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে।
কৃষি অফিস ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কালিয়া উপজেলায় আট হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ হয়েছে। যা গত বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। কালিয়া পৌরসভার ছোট কালিয়ার গোবিন্দ নগর এলাকার বিলে, সালামাবাদ ইউনিয়নের ভাউরীর চরে আর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ‘ভক্তডাঙ্গা’ বিলের অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে মাচায় মাচায় বিশেষ জাতের বারোমাসি তরমুজ আবাদ হয়েছে।
এশিয়ান-২ এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। বিশেষ করে তৃপ্তি জাতের তরমুজ বেশি সুস্বাদু। এই তরমুজ চাষে খরচ কম, একর প্রতি ১০/১২ হাজার টাকা, কিন্ত বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় কৃষকও খুশি।
অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তরমুজ চাষে সফল চাষি নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ কামাল হোসেন। বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর সে অনুযায়ী গত বছর গাছবাড়িয়া বিলের ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে প্রথম বারের মত পরীক্ষামূলকভাবে এক হাজার টি চারা রোপণ করে ২ লক্ষ টাকা লাভ করেন। এবার তিনি ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘার মত জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। বৈরি আবওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে গত মে মাসের ১৮ তারিখে ২ হাজারটি চারা রোপণ করেছেন। এরপর সঠিক সময়ে সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি, ডগা কর্তন, ডগা মাচায় উঠিয়ে দেওয়া ও তরমুজের গায়ে জাল পরিয়ে টানিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শেষ করেন। এরপর ৩৫ দিনের মাথায় ফুল ও ফল আসে এবং ৬৫ দিনের মাথায় প্রথম বার ফল সংগ্রহ শুরু করেন । তার মোট খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আর এবার আশা করছেন ৪ লাখ টাকা বিক্রয় হবে।
খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক,শেখ ফজলুল হক মনি বলেন, কালিয়ায় স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অসময়ের তরমুজ চাষে সফল কৃষকরা। প্রন্ত— অঞ্চল দূর্গম জায়গা যেখানে সরকারি সেবা সহজে পৌঁছায় না সেখানে সেবা পৌঁছে দেওয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমরা সেই কাজটি করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি নড়াইল এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন, কালিয়ায় অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষকরা সফল। তাঁরা মাত্র ৬০-৬৫ দিনে খরচের ৬ গুন লাভবান হচ্ছেন। আমরা স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে থেকে সর্বদা সহযোগিতা করে থাকেন।