শিক্ষার্থীরা তার কাছে কোচিং করেনি, এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দিয়েছেন এক সহকারী শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গঠিত বোর্ড তদন্ত করে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এছাড়াও গোপালগঞ্জ শহরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এস.এম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রোকসানা আক্তার লীরার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে আপসারণের জন্য সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এতে সই করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধানসহ ১৩ জন শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া খানম বলেন, “অভিযুক্ত রোকসানা আক্তার লীরা অন্তহীন অনিয়ম করে আসছেন। তিনি সম্প্রতি প্রথম মূল্যায়ন পরীক্ষায় তার হাতে যাওয়া সবগুলো বিষয়ের খাতায় শিক্ষার্থীদের নম্বর কম দিয়েছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে বোর্ড বসিয়ে তার অনিয়মের সত্যতা পাই।”
বিদ্যালয় প্রধান আরও বলেন, “এছাড়া তিনি তার কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাকদের চাপ প্রয়োগ করেন। ভর্তি না হলে পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় দেখান। শিক্ষার্থীদের তিনি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। তিনি ক্লাসেও আন্তরিক নন।”
সুরাইয়া খানম বলেন, “বার বার আমার বিদ্যালয় গোপালগঞ্জ জেলায় শ্রেষ্ঠ হয়ে আসছে। এ শ্রেষ্ঠত্ব ম্লান হোক তা আমরা চাই না। তাই সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের স্বার্থে রোকসানা আক্তার লীরার দ্রুত অপসারণের দাবি জানাই।”
সূত্র জানায়, এর আগেও নানান অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অপকর্মের কারণে এর আগেও লীরাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তখন অন্তঃসত্ত্বা থাকায় মানবিক কারণে ওই আদেশ প্রত্যাহারও করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি সতর্ক হওয়ার পরিবর্তে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিম শাহরিয়ারের ভাষ্য, “প্রথম পরীক্ষায় লীরা ম্যাডাম আমার খাতা ঘষামাজা করে অংক কেটে দিয়েছেন। তিনি আমাকে কম নম্বর দিয়েছেন। অভিযোগ জানালে প্রধান শিক্ষকের গঠিত বোর্ড এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। স্কুলে এমন চলতে থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।”
একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী অনিক বৈদ্যের অভিযোগ, “লীরা ম্যাডাম আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেন। তিনি তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থী দিয়া পাল, মিনহাজ ও আল জিয়ানসহ অন্যনদের গণিতে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়েছেন।”
একই ধরনের অভিযোগ শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তারেরও।
ডা. মিতা রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, “লীরা ম্যাডাম খাপার ব্যাবহার করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ভয়ভীতি দেখান। এমন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ। এসব আচরণ স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিমল চন্দ্র বালা গণমাধ্যমকে বলেন, “এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ওই শিক্ষক দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখব।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক রোকসানা আক্তার লীরার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। মেসেজ পাঠিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।