প্রতিনিয়ত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এখন প্রতিটি পরিবারে বহুমূত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি দেখা যায়। খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অত্যাধিক মানসিক চাপের কারণে বয়স ত্রিশের কোটা না পেরোতেই অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার জিনগত কারণেও কারও কারও শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
ডায়াবেটিস নিজে একটি পৃথক রোগ হলেও এর কারণে শরীরে অনেক অসুখ দেখা দেয়। কারণ ডায়াবেটিসের হাত ধরে শরীরে বাসা বাঁধে কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপের মতো হাজারটা রোগ বাসা বাঁধে। তাই ডায়াবেটিসকে অনেক রোগের সূতিকাগার বললেও ভুল হবে না।
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। একবার আক্রান্ত হলে তা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই। তাই চিকিৎসকরা সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে বলে থাকেন। কেননা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের দ্বারাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কিন্তু ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কষ্টের কাজ। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ অনুসরণ করতে হয়। খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি, প্রাত্যহিক জীবনেও কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ নেওয়া তো আছেই।
যত কঠিনই হোক, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কিছু ঘরোয়া উপায়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভরসা রাখতে পারেন ঘরোয়া পানীয়ে। জেনে নিন কোন তিন পানীয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে-
মেথি জল
ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চোখ বন্ধ করে মেথির বীজের ওপর ভরসা রাখতে পারেন। রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস সামলাতেও এই মসলা বেশ কার্যকর। মেথিতে থায়ামিন, ফোলিক অ্যাসিড, রাইবোফল্যাভিন, নিয়াসিনের মতো উপকারি উপাদান রয়েছে। এছাড়া মেথিতে থাকা পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়ামের মতো উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মেথি তাই মহৌষধের মতো। রাতের বেলা ১০ গ্রাম মেথি এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি মিশ্রিত এই পানি ভালো্ করে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথি জল পানের এই অভ্যাস দারুণ উপকারি।
দারুচিনি চা
চা পান ছাড়া অনেকের সকাল যেন শুরুই হতে চায় না। ডায়াবেটিস রোগীরাও এর বাইরে নন। কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে সকালে দুধ-চিনি দেওয়া চায়ের পরিবর্তে দারুচিনি দিয়ে তৈরি চা খেতে পারেন। রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুচিনি বেশ সহায়ক। টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো কোনো রোগ থাকলে শরীর ইনসুলিন হরমোনের সঙ্গে ঠিকমতো মানিয়ে চলতে পারে না। দারুচিনি সেই কাজে সাহায্য করে।
গ্রিন টি
ওজন কমাতে ডায়েট কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে অনেকেই গ্রিন টি পান করে থাকেন। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও কিন্তু গ্রিন টি বেশ উপকারী। কারণ প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
গ্লুকোজ ফাস্টিংয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সাহায্য করে। গ্রিন টি নিয়ম করে খেলে বিপাকহার বেড়ে যায়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে আর ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতাও বেড়ে যায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।