প্রায়ই দেশের রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “কেউ কারো কথা শোনে না।” ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেন। তবে কাজ হয় না। প্রায়ই এই দৃশ্য দেখা যায়।
একই দৃশ্য নিত্যপণ্যের বাজারেও। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতিতে সরকার পাঁচ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। পাঁচ পণ্য হলো- আলু, পেঁয়াজ, ডিম, ভোজ্যতেল এবং চিনি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দাম কার্যকরে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। তবে বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা; আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা এবং কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা; ডিম সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে নির্ধারিত দাম এখনো বাজারে কার্যকর হয়নি। ভোক্তা অধিকার অভিযান চালালেও আলু-পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই; দাম বেঁধে দিয়েও ব্যবসায়ীদের সেই নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে বাঁধা যায়নি।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা বেশিতে। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা প্রতি কেজি৷ এই বাজারে আলু ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আলু-পেঁয়াজের বিক্রেতা রুবেল বলেন, আমার আলু কেনা পড়ছে ৪০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, ক্রস পেঁয়াজ ৭৮ টাকা, ভারতীয় ৬৫ টাকায় কিনেছি। আমি কমে কীভাবে বিক্রি করবো?
এ সময় এই বিক্রেতা নিজের গতকালের কেনা পণ্যের ক্রয় রশিদও দেখান।
আলু-পেঁয়াজ কিনছিলেন রাশেদুল হক। সরকার নির্ধারিত দামে কিনতে পারছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্ধারণ জিনিসটা আবার কী? এটা শুধু শুনেছিই যে সরকার দাম নির্ধারণ করেছে, কিনতে গিয়ে তার কিছু তো চোখে পড়লো না।
আলু-পেঁয়াজ নির্ধারিত দামে বিক্রি না করলেও ডিম বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামের থেকে কমেই। আজ প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা, সাদা ডিম ডজন প্রতি ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
এছাড়া আজ দেশি আদা ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০, দেশি রসুন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আজকের বাজারে সব ধরনের সবজির দাম রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৮০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা ও চাল কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন আজকে কয়েকটি সবজি বাদ দিলে প্রায় সব সবজির দামই কিছুটা বেশি আছে।
এছাড়া আজ ইলিশ মাছ ৮৫০- ২২০০ টাকা, রুই মাছ ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৫৫০-৬০০ টাকা, কালবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০ টাকা, কৈ মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১০০০টাকা, বোয়াল মাছ ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৯৫, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজকের কাঁচা বাজারে মুদি দোকানগুলোয় অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।