রিজার্ভ কমার নেপথ্যে আমদানি ব্যয়

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
রিজার্ভ কমার নেপথ্যে আমদানি ব্যয়
ডলার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো। ফাইল ছবি

দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ক্রমবর্ধমান আমদানি অর্থ পরিশোধ, এই হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রেমিট্যান্স হ্রাসও ডলার সংকটের অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রিজার্ভ থেকে ৩৭৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যার বেশিরভাগই দেশের আমদানি দায় মেটানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১০৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে, রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪৬৩৯ কোটি ডলার। এর অর্থ হলো ২৭ মাসের ব্যবধানে (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর) এর পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ২৭ মাসে রিজার্ভ থেকে ২৫০০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে, ৩৭৫ কোটি ডলার বিক্রি করা ছাড়াও, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ১২৫৮ কোটি ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির জন্য।

সরকার কিছু পণ্য আমদানির জন্য তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির আকারে সহায়তা দিচ্ছে। এতে দেশে ডলারের সংকট আরো বেড়েছে। আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্তের অংশ হিসেবে, আইএমএফের সঙ্গে স্থির করা নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য ৩০ জুনের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংক অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের জন্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) বকেয়া নভেম্বরের শুরুতে পরিশোধ করতে হবে। এর পর রিজার্ভ আরো কমে ১৮০০ কোটি ডলার হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে দেড় বছর ধরে ডলারের সংকট চলছে। এই সংকট নিরসনে, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও, সংকট অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে, একটি পদক্ষেপ ছিলো শুল্ক ও ট্যারিফ বৃদ্ধির মাধ্যমে অ-প্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন আইটেম আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা। তবে, মজুদ হ্রাসের প্রবণতা থামানোর চেষ্টা করার ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট ভাবে কাজ করেনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মনসুর বলেন, ডলার সংকট সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের একটি পরিসরকে খারাপ অবস্থায় ফেলেছে এবং বিভিন্ন সেক্টর-কে প্রভাবিত করেছে। অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স হ্রাস এবং বাণিজ্য ভিত্তিক অর্থ পাচার বৃদ্ধি, রিজার্ভ হ্রাসের দুটি প্রধান কারণ।

গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, রেমিট্যান্স হ্রাস ডলার সংকটের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। কারণ, ব্যাংক এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলোর দেয়া ডলারের দাম এবং খোলা বাজারের দামের মধ্যে একটি বিশাল ফারাক রয়েছে।

ব্যাংকগুলো বর্তমানে প্রতি ডলার রেমিট্যান্সের জন্য ১১০ টাকা দেয়। খোলা বাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১২২ টাকার বেশি পাওয়া যায়। তাই, জনশক্তির রপ্তানি বাড়লেও, প্রবাসী শ্রমিকরা টাকা পাঠানোর জন্য অনানুষ্ঠানিক হুন্ডি চ্যানেলে বেশি আগ্রহী হয়েছেন; এজন্য রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে।

আহসান মনসুর বলেন, নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না; কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে। যদি একবার এই পরিস্থিতির উত্তরণ হয় এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হয়, তবে তারা আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পারে।

সেপ্টেম্বরে ১০টি কোম্পানির মাধ্যমে, ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বাণিজ্য ভিত্তিক পাচার হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এটিকে হিমশৈলের অগ্রভাগ বলে মনে করা হচ্ছে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রিজার্ভ কমার নেপথ্যে আমদানি ব্যয়

রিজার্ভ কমার নেপথ্যে আমদানি ব্যয়
ডলার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো। ফাইল ছবি

দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ক্রমবর্ধমান আমদানি অর্থ পরিশোধ, এই হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রেমিট্যান্স হ্রাসও ডলার সংকটের অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রিজার্ভ থেকে ৩৭৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যার বেশিরভাগই দেশের আমদানি দায় মেটানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১০৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে, রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪৬৩৯ কোটি ডলার। এর অর্থ হলো ২৭ মাসের ব্যবধানে (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর) এর পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ২৭ মাসে রিজার্ভ থেকে ২৫০০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে, ৩৭৫ কোটি ডলার বিক্রি করা ছাড়াও, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ১২৫৮ কোটি ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির জন্য।

সরকার কিছু পণ্য আমদানির জন্য তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির আকারে সহায়তা দিচ্ছে। এতে দেশে ডলারের সংকট আরো বেড়েছে। আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্তের অংশ হিসেবে, আইএমএফের সঙ্গে স্থির করা নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য ৩০ জুনের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংক অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের জন্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) বকেয়া নভেম্বরের শুরুতে পরিশোধ করতে হবে। এর পর রিজার্ভ আরো কমে ১৮০০ কোটি ডলার হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে দেড় বছর ধরে ডলারের সংকট চলছে। এই সংকট নিরসনে, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও, সংকট অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে, একটি পদক্ষেপ ছিলো শুল্ক ও ট্যারিফ বৃদ্ধির মাধ্যমে অ-প্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন আইটেম আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা। তবে, মজুদ হ্রাসের প্রবণতা থামানোর চেষ্টা করার ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট ভাবে কাজ করেনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মনসুর বলেন, ডলার সংকট সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের একটি পরিসরকে খারাপ অবস্থায় ফেলেছে এবং বিভিন্ন সেক্টর-কে প্রভাবিত করেছে। অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স হ্রাস এবং বাণিজ্য ভিত্তিক অর্থ পাচার বৃদ্ধি, রিজার্ভ হ্রাসের দুটি প্রধান কারণ।

গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, রেমিট্যান্স হ্রাস ডলার সংকটের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। কারণ, ব্যাংক এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলোর দেয়া ডলারের দাম এবং খোলা বাজারের দামের মধ্যে একটি বিশাল ফারাক রয়েছে।

ব্যাংকগুলো বর্তমানে প্রতি ডলার রেমিট্যান্সের জন্য ১১০ টাকা দেয়। খোলা বাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১২২ টাকার বেশি পাওয়া যায়। তাই, জনশক্তির রপ্তানি বাড়লেও, প্রবাসী শ্রমিকরা টাকা পাঠানোর জন্য অনানুষ্ঠানিক হুন্ডি চ্যানেলে বেশি আগ্রহী হয়েছেন; এজন্য রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে।

আহসান মনসুর বলেন, নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না; কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে। যদি একবার এই পরিস্থিতির উত্তরণ হয় এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হয়, তবে তারা আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পারে।

সেপ্টেম্বরে ১০টি কোম্পানির মাধ্যমে, ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বাণিজ্য ভিত্তিক পাচার হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এটিকে হিমশৈলের অগ্রভাগ বলে মনে করা হচ্ছে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: মনসুরাবাদ হাউজিং, ঢাকা-১২০৭ এজেড মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।