ইসরায়েলের অবরোধের জেরে ফিলিস্তিনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। এ কারণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন গাজার কর্মকর্তারা।
এদিকে, টানা হামলার জেরে গাজার হাসপাতালগুলো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে জানান তারা। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানায়, ইসরায়েলি বিমান থেকে তাদের সদর দপ্তরে আঘাত হানা হয়েছে।
উদ্ধারকারী সংস্থাটি জানায়, উত্তর গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের জেট বিমান বোমাবর্ষণ করেছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হুমজা ইউসুফ বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি একেবারেই ভয়াবহ। গাজায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে সম্মিলিত শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের যা করতে হবে তা হলো- ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জীবনকে সমান হিসাবে বিবেচনা করা। নারী-পুরুষ ও শিশুদের সম্মিলিত শাস্তিকে ন্যায়সঙ্গত বলা যায় না। হামাসের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো সম্পর্ক নেই।
গাজার স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল পুরো এলাকা ধ্বংস করছে। নির্দিষ্ট বা বিশেষ ভবন বা প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসরায়েলিরা গাজাকে একেকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সবগুলো একে একে ধ্বংস করছে।
কর্মকর্তাদের ধারণা, ইসরায়েলিরা স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য তারা এলাকা প্রস্তুত করতে প্রধান সড়ক, প্রধান এলাকা ধ্বংস করছে।
চলমান অবরোধের আগেও গাজার বাসিন্দারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, চলাচলে বিধি-নিষেধ ও পানির সঙ্কটে ভুগছিলেন।
সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, এই অঞ্চলে এখনই সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ হবে না। তবে এখানে বিদ্যুৎ, না পানি, গ্যাস—সব বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলি অবকাঠামো মন্ত্রী গাজায় পানি সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, অতীতে যা ছিল তা ভবিষ্যতে আর থাকবে না।
এ ঘোষণার আগেই ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের পদক্ষেপের কারণে হাসপাতালগুলো ওষুধ, চিকিৎসা সরবরাহ ও জ্বালানির ঘাটতির মুখে পড়েছে।
মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা ও ওষুধ, জ্বালানি ও পাওয়ার জেনারেটরের মতো জরুরি সেবা সরবরাহে ইসরায়েলকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা করে হামাস। একযোগে পাঁচ হাজার রকেট ছোড়ে তারা। এর অল্প সময়ের ব্যবধানে পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই পক্ষের হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হামাসের এই হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকাকে ‘জনমানবশূন্য দ্বীপে’ পরিণত করার হুঁশিয়ারি দেন।
এর মধ্যে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের জন্য গাজা সীমান্তে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সমাবেশ শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজার বাসিন্দাদের আবারও ভয়ানক মানবিক সঙ্কটের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় অন্তত এক লাখ ৯০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
শনিবারের হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকার অন্তত ১লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। অনেকেই স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছেন।
জেনেভায় ওসিএইচএর মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেন, সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আরও বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলি বিমান হামলা গাজা জুড়ে বাসস্থান, স্কুলে আঘাত করেছে। এমনকি তারা বড় টাওয়ার ব্লক, গাজার স্কুল ও আবাসিক ভবনে হামলা চালাচ্ছেন। এতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে স্পষ্ট বলা আছে, হামলার ঘটনা ঘটলেও তাতে বেসামরিক জনসংখ্যা এবং বেসামরিক বস্তুকে রক্ষা করতে হবে।
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজার হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি নিরাপদ করিডোর করার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫১০০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলে ৯০০ জনের বেশি ও লেবাননে চার হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলে ও গাজা উপত্যকার আশপাশে প্রায় ১৫০০ হামাস যোদ্ধার মরদেহ পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা গাজা উপত্যকায় ২০০টিরও বেশি স্থানে আক্রমণ চালিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে দুই ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে।