বিরোধীদল নির্বাচনের বাইরে থাকুক এটা আওয়ামী লীগ কখনোই চায়নি জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আসলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুস্থ ও সুষ্ঠু করবে।
‘অনেকেই এসেছেন কিন্তু বিএনপিসহ যারা আসেননি, তারা আসলে নির্বাচনটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো, সেটা আমরা জানি। তারপরও তারা নেই, কিন্তু সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ।’
নির্বাচনে না এসে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় নেমেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মনে করেছিল তারা না থাকলে সারাদেশে লোকজন থাকবে না এবং নির্বাচন উৎসবমুখর হবে না, ভোটার উপস্থিতি শূন্যের কোটায় যাবে। এরকম দুঃস্বপ্ন নিয়ে তারা আন্দোলন করে ব্যর্থ। এখন তারা সরকার কিভাবে ব্যর্থ হবে, ভোটার টার্নওভার কিভাবে কম হবে এবং নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে না বলে নানান গল্প বলে যাচ্ছে।
এমপি মন্ত্রীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে কাদের বলেন, নির্বাচন হলে আমাদের মতো দেশে টুকটাক ঘটনা ঘটে। কিছু কিছু সহিংসতাও বেড়েছে। একটা বিষয় দুঃখজনক ও নিন্দনীয় যে দায়িত্বশীল নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন। এমপি ছিল, মন্ত্রী ছিল এমন লোকেরা এখনো ধমকের সুরে কথা বলেন। এখনো ক্ষমতার দাপট যারা দেখায় তাদের মুখ বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের উদ্দেশ্যকে আমরা ব্যাহত হতে দিতে পারি না। পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। অসুস্থ পরিবেশ যারাই সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে কোনো হেলাফেলা চলবে না।
‘রোজ পত্রিকা খুললেই দেখি ধমক দিচ্ছে। কারও বাপ দাদার সম্পত্তি নাকি সংসদীয় এলাকা? এলাকা জনগণের, জনগণকে ভোট দিতে হবে, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে যারা বাধা দেবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। কিছু লোকের কথাবার্তা শুনলে অবাক লাগে। এরা কিসের জনপ্রতিনিধি? যারা বাজে কথা বলে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। যারা নষ্ট করবেন তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিলে আমরা অকুণ্ঠ সমর্থন জানাব। এখানে কোনো প্রকার আপস করবো না।’
কাদের বলেন, এবারের নির্বাচনটা আমরা খুব ভালোভাবে করতে চাই। নির্বাচন নিয়ে বদনাম নিতে চাই না। শেখ হাসিনা একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন সত্যিকার অর্থে চান। তার ইচ্ছেকে সার্থক করতে হবে। সে ব্যাপারে পোলিং এজেন্টদের নিষ্ঠার সঙ্গে করতে হবে।
‘আমরা খুবই কঠিন সময় অতিক্রম করছি। সারাবিশ্বই সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্ব সংকটের প্রভব-প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন নই। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আছে।’
ইউক্রেন, সুদান ও মাধ্যপ্রাচ্য সংকটের কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে আমরাও সংকটে আছি। দোষটা বড় বড় দেশগুলোর কিন্তু দায় পড়ছে আমাদের ওপর, শাস্তি পাচ্ছি আমরা। দেশে আমাদের গরীবেরা সাফার করছে, প্রান্তিক মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বাজারে জিনিসপত্রের যে ঊর্ধগতি সেটা নিয়েও মানুষের দুঃখ কষ্টের আবহ তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল হিসাবে আমরা দায় এড়াতে পারি না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে, ডলারে সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহনে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে।
‘সংকটেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচন করতে হচ্ছে বলে জানিয়ে কাদের বলেন, কেউ কেউ বলতে পারে এ সংকট পার করে নির্বাচন করা উচিত। অবশ্যই উচিত নয়, কারণ আমাদের সংবিধান আছে, সাংবিধানিক নিয়ম আছে। নির্বাচন দিয়েই সংবিধান রক্ষা করতে হবে। নির্বাচন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন করতে হচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে।’
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, নির্বাচন বানচাল করতে চায় মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ করে নয়, বানচাল করতে চায় সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে। এ সন্ত্রাস-সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সহিংসতায় ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন কাদের।
পৃথিবীর অনেক দেশের রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে সরে যায় উল্লেখ করে কাদের বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য সহিংসতার প্রস্তুতি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশে এটা হচ্ছে। নেতা নেই, রিমোট কন্ট্রোলে লিডারশিপ।
তারেক রহমানের সমালোচনা করে কাদের বলেন, তিনি এখন রাজনীতি করছেন না, রাজনীতিটাকে ধ্বংস করছেন। দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। তার বাবা জিয়াউর রহমান এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আমরা হরতাল করেছি কিন্তু বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস, বিকৃতি ও ব্যবস্থার ওপর আঘাত করেছে। সে কারণে এটা আমরা চাই না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আমরা বাতিল করিনি এটা করেছে বিচার বিভাগ। কাজেই এ ব্যবস্থা মরে গেছে, জীবিত করার প্রয়োজন নেই।