সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পলাতক গুজরাটে বিলকিসের সেই ১১ ধর্ষক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পলাতক গুজরাটে বিলকিসের সেই ১১ ধর্ষক
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বেপাত্তা বিলকিস বানুর ১১ ধর্ষক। গুজরাটের দাহোদ জেলার রন্ধিকপুর ও সিংভাদ গ্রামে তাঁদের বাড়ি গতকাল সোমবার থেকেই তালাবন্ধ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা মাথা কুটে মরলেও এলাকার কেউ জানাতে পারেননি, কোথায় তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন। পাশাপাশি দুই গ্রামের প্রায় সবাই নির্বাক।

অপরাধীদের আত্মীয়দের কেউ কেউ অবশ্য দোষারোপ করেছেন কংগ্রেসকে। এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের প্রতিনিধিকে এক অপরাধীর আত্মীয়রা বলেছেন, গোটা ঘটনাটাই নাকি কংগ্রেসের রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাঁদের দাবি, তাঁরা হিন্দু। ঈশ্বরে বিশ্বাসী। মূল্যবোধসম্পন্ন পরিবার। পরিবারের কেউ এমন ধরনের ঘৃণ্য আচরণ করতে পারেন না।
কেউ আবার বলেছেন, তাঁরা কেউই বেআইনিভাবে কারাগার থেকে মুক্তি পাননি। এত বছর যাঁরা কারাভোগ করেছেন, তাঁদের ফের কারাগারে যেতে হলে যাবেন। আইন–আদালতই তা ঠিক করবেন।

আইন–আদালত ওই ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের মুক্তিদানের পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন। সাড়া জাগানো এই মামলার এটা এক নতুন মোড়। দুই সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ জনকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার আগে যদিও সবাই নিখোঁজ।

সবার নজর এখন মহারাষ্ট্র সরকারের ওপর। গুজরাটের মতো এই সরকারেরও শরিক বিজেপি। কী করবে রাজ্য সরকার? যাঁদের মুক্তি বিজেপি উদ্‌যাপন করেছিল, পারবে কি তারা ওই ১১ জনকে কোনোভাবে আশ্বস্ত করতে? প্রশ্নটি আলোচিত হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধীরা শাস্তির মেয়াদ কমানোর আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু সে জন্য তাঁদের ফের কারাগারে ফিরে যেতে হবে। কারণ, কারাগারের বাইরে জামিনে বা অন্যভাবে মুক্ত থাকা অবস্থায় সেই আবেদন জানানোর অধিকার তাঁদের নেই।
অপরাধীরা আবেদনে বলেছিলেন, তাঁদের কারাগারের বাইরে থাকার সুযোগ দেওয়া হোক। তাঁদের মুক্ত থাকার স্বাধীনতা রক্ষা করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সেই আবেদন নাকচ করে বলেছিলেন, অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে সাজা ভোগ করার ফলে সেই স্বাধীনতা তাঁরা হারিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই কথাও দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অপরাধীরা মুক্তি পাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে শুধু মহারাষ্ট্র সরকারের। কারণ, বিচারটা ওই রাজ্যেই হয়েছিল। ঘটনা গুজরাটে ঘটলেও কিংবা গুজরাটের কারাগারে অপরাধীরা বন্দী থাকলেও শাস্তি মওকুফের ক্ষমতা তাঁদের নেই। এর অর্থ, ওই ১১ জন অপরাধীকে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে শাস্তি কমানোর আবেদন জানাতে হবে।

কী করবে মহারাষ্ট্র সরকার? বিচারে দেখা গেছে, রাধেশ্যাম শাহ নামে এই মামলার এক অপরাধী আগে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআই ও মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক তার বিরোধিতা করেছিলেন। সিবিআইয়ের বিচারক ২০০৮ সালে রাজ্য সরকারের জারি করা প্রস্তাব দেখিয়ে বলেছিলেন, এটা এমন এক অপরাধ, ২৮ বছর কারাভোগ না করলে যা থেকে মুক্তির আবেদন করাই যায় না।

রাধেশ্যাম শাহ সেই আবেদন জানিয়েছিলেন ২০১৯ সালের ১ আগস্ট। মহারাষ্ট্রের সরকারে তখন বিজেপি–শিবসেনা জোট। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফাডনবিশ। সিবিআই তার প্রতিবেদন পেশ করেছিল ১৪ আগস্ট। আবেদন নাকচ করার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, ২০০৮ সালে গৃহীত রাজ্য সরকারের সেই প্রস্তাবটি। সিবিআই আদালতও জানিয়েছিল, রাজ্যের বিচারে শাহর অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর ও ঘৃণ্য।

অন্য অপরাধীরা গোধরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একই আবেদন জানিয়েছিলেন। গোধরা কারা কর্তৃপক্ষও সিবিআই আদালতের কাছে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। ২০২১ সালের মার্চে সিবিআই আদালতের বিচারক জানান, অপরাধীদের অপরাধ সাব্যস্ত হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। অতএব তারাই রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী।

সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও জানাতে ভোলেননি, মুক্তি পেতে গুজরাট রাজ্য সরকারের সাহচর্যে অপরাধীরা বহু তথ্য গোপন করেছিলেন। বিজেপিশাসিত গুজরাট সরকারের কাছে এই রায় এক বিরাট ধাক্কা। সেই কারণে রায় দেওয়ার দুদিন পরও বিজেপির কেউ একটিও মন্তব্য করেননি।

গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বিলকিস বানু বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে বুকে চেপে রাখা একটা পাথর কেউ তুলে নিল। এত দিন পর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছি। দেড় বছর পর আজ প্রথম আমি হাসছি। আজ বাচ্চাদের আদর করেছি। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ। আমাদের মতো হতভাগ্যদের বুঝিয়েছেন, দেশে ন্যায়বিচার আছে। আজ আমার কাছে এটা বাস্তবিকই একটা নতুন বছর।’

বিলকিসের এই আনন্দাশ্রু ক্ষণস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে মহারাষ্ট্র সরকারের ওপর। সুপ্রিম কোর্ট বলটি রাজ্য সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পলাতক গুজরাটে বিলকিসের সেই ১১ ধর্ষক

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পলাতক গুজরাটে বিলকিসের সেই ১১ ধর্ষক
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বেপাত্তা বিলকিস বানুর ১১ ধর্ষক। গুজরাটের দাহোদ জেলার রন্ধিকপুর ও সিংভাদ গ্রামে তাঁদের বাড়ি গতকাল সোমবার থেকেই তালাবন্ধ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা মাথা কুটে মরলেও এলাকার কেউ জানাতে পারেননি, কোথায় তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন। পাশাপাশি দুই গ্রামের প্রায় সবাই নির্বাক।

অপরাধীদের আত্মীয়দের কেউ কেউ অবশ্য দোষারোপ করেছেন কংগ্রেসকে। এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের প্রতিনিধিকে এক অপরাধীর আত্মীয়রা বলেছেন, গোটা ঘটনাটাই নাকি কংগ্রেসের রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাঁদের দাবি, তাঁরা হিন্দু। ঈশ্বরে বিশ্বাসী। মূল্যবোধসম্পন্ন পরিবার। পরিবারের কেউ এমন ধরনের ঘৃণ্য আচরণ করতে পারেন না।
কেউ আবার বলেছেন, তাঁরা কেউই বেআইনিভাবে কারাগার থেকে মুক্তি পাননি। এত বছর যাঁরা কারাভোগ করেছেন, তাঁদের ফের কারাগারে যেতে হলে যাবেন। আইন–আদালতই তা ঠিক করবেন।

আইন–আদালত ওই ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের মুক্তিদানের পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন। সাড়া জাগানো এই মামলার এটা এক নতুন মোড়। দুই সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ জনকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার আগে যদিও সবাই নিখোঁজ।

সবার নজর এখন মহারাষ্ট্র সরকারের ওপর। গুজরাটের মতো এই সরকারেরও শরিক বিজেপি। কী করবে রাজ্য সরকার? যাঁদের মুক্তি বিজেপি উদ্‌যাপন করেছিল, পারবে কি তারা ওই ১১ জনকে কোনোভাবে আশ্বস্ত করতে? প্রশ্নটি আলোচিত হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধীরা শাস্তির মেয়াদ কমানোর আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু সে জন্য তাঁদের ফের কারাগারে ফিরে যেতে হবে। কারণ, কারাগারের বাইরে জামিনে বা অন্যভাবে মুক্ত থাকা অবস্থায় সেই আবেদন জানানোর অধিকার তাঁদের নেই।
অপরাধীরা আবেদনে বলেছিলেন, তাঁদের কারাগারের বাইরে থাকার সুযোগ দেওয়া হোক। তাঁদের মুক্ত থাকার স্বাধীনতা রক্ষা করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সেই আবেদন নাকচ করে বলেছিলেন, অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে সাজা ভোগ করার ফলে সেই স্বাধীনতা তাঁরা হারিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই কথাও দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অপরাধীরা মুক্তি পাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে শুধু মহারাষ্ট্র সরকারের। কারণ, বিচারটা ওই রাজ্যেই হয়েছিল। ঘটনা গুজরাটে ঘটলেও কিংবা গুজরাটের কারাগারে অপরাধীরা বন্দী থাকলেও শাস্তি মওকুফের ক্ষমতা তাঁদের নেই। এর অর্থ, ওই ১১ জন অপরাধীকে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে শাস্তি কমানোর আবেদন জানাতে হবে।

কী করবে মহারাষ্ট্র সরকার? বিচারে দেখা গেছে, রাধেশ্যাম শাহ নামে এই মামলার এক অপরাধী আগে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআই ও মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক তার বিরোধিতা করেছিলেন। সিবিআইয়ের বিচারক ২০০৮ সালে রাজ্য সরকারের জারি করা প্রস্তাব দেখিয়ে বলেছিলেন, এটা এমন এক অপরাধ, ২৮ বছর কারাভোগ না করলে যা থেকে মুক্তির আবেদন করাই যায় না।

রাধেশ্যাম শাহ সেই আবেদন জানিয়েছিলেন ২০১৯ সালের ১ আগস্ট। মহারাষ্ট্রের সরকারে তখন বিজেপি–শিবসেনা জোট। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফাডনবিশ। সিবিআই তার প্রতিবেদন পেশ করেছিল ১৪ আগস্ট। আবেদন নাকচ করার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, ২০০৮ সালে গৃহীত রাজ্য সরকারের সেই প্রস্তাবটি। সিবিআই আদালতও জানিয়েছিল, রাজ্যের বিচারে শাহর অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর ও ঘৃণ্য।

অন্য অপরাধীরা গোধরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একই আবেদন জানিয়েছিলেন। গোধরা কারা কর্তৃপক্ষও সিবিআই আদালতের কাছে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। ২০২১ সালের মার্চে সিবিআই আদালতের বিচারক জানান, অপরাধীদের অপরাধ সাব্যস্ত হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। অতএব তারাই রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী।

সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও জানাতে ভোলেননি, মুক্তি পেতে গুজরাট রাজ্য সরকারের সাহচর্যে অপরাধীরা বহু তথ্য গোপন করেছিলেন। বিজেপিশাসিত গুজরাট সরকারের কাছে এই রায় এক বিরাট ধাক্কা। সেই কারণে রায় দেওয়ার দুদিন পরও বিজেপির কেউ একটিও মন্তব্য করেননি।

গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বিলকিস বানু বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে বুকে চেপে রাখা একটা পাথর কেউ তুলে নিল। এত দিন পর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছি। দেড় বছর পর আজ প্রথম আমি হাসছি। আজ বাচ্চাদের আদর করেছি। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ। আমাদের মতো হতভাগ্যদের বুঝিয়েছেন, দেশে ন্যায়বিচার আছে। আজ আমার কাছে এটা বাস্তবিকই একটা নতুন বছর।’

বিলকিসের এই আনন্দাশ্রু ক্ষণস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে মহারাষ্ট্র সরকারের ওপর। সুপ্রিম কোর্ট বলটি রাজ্য সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত