দুঃসহ এক রমজান মাস পালন করছেন গাজার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে বোমা হামলা করে। এতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। ভবনটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা থাকত। নিহতদের মধ্যে অন্তত চার শিশু রয়েছে।
সোমবার ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের প্রকাশিত পোস্টে দেখা যায়, ইসরায়েলি অভিযানে রাফাহ শহরে অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কয়েকটি শিশুও ছিল।
এদিকে সোমবার যুক্তরাজ্যের ইউনাইটেড কিংডমের রয়্যাল এয়ার ফোর্স গাজায় ১০ মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য বিতরণ করেছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩২,৩৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৪,৬৯৪ জন আহত হয়েছে।
এর আগে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। ওই সময় বন্দি করা অনেকেই এখনও হামাসের হেফাজতে রয়েছে।
এদিকে সোমবার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র ভোট না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
মূলত গাজায় এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক, নিরাপত্তা পরিষদে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগেও নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব এসেছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় তা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনার পর নেতানিয়াহুর অফিস বলেছে, “ইসরায়েলের যে প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা ছিল, আপাতত তারা সেখানে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন।”
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, “ইসরায়েলের প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল করা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। রাফাহ ছাড়া আর কোনো পথে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে।”
তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ে তাদের অবস্থান বদলে ফেলেছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। তারা ভোটে অংশ নেয়নি কারণ, প্রস্তাবে হামাসের যথেষ্ট বিরোধিতা করা হয়নি। তবে প্রস্তাবে বন্দিদের ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দাবি মেলানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি সকলেই হামাসকে একটি “সন্ত্রাসী সংগঠন” বলে মনে করে।
এদিকে ২৫ মার্চ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়।
এই প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি হামাসের হাত থাকা জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির শর্ত রাখা হয়েছে।
এ প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।
এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই প্রস্তাব অবশ্যই বাস্তবায়ন হতে হবে। যদি কোনো পক্ষ এই যুদ্ধবিরতি ও এর শর্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল।”
এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি পাস হয়নি। সেদিন মস্কোর অভিযোগ ছিল, ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতি ইসরায়েলের ওপর কোনো চাপ তৈরি করছে না।