কালো জিরার বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে ‘নাইজিলা সাটিভা’ (Nigella sativa), এটি পার্সলে পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটা রাজা টুট এর সমাধি হতে আবিষ্কৃত হয় এবং সে সময় এটা পরকালে ব্যবহার করা হয় বলে বিশ্বাস করা হত। মানুষ ২০০০ বছর ধরে ঔষধ হিসেবে কালো জিরার বীজ ব্যবহার করেছে। এটা লতাপাতা জতীয় একটি উদ্ভিদ। এর সূক্ষ্ম বেগুনি ও সাদা ফুল হয়ে থাকে। মসলা হিসেবে কালো জিরার চাহিদা অনেক। কালো জিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা মানব শরীরের জন্য খুব উপকারি। এতে আছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস। এছাড়া এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক।
কালো জিরাতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন B1, ভিটামিন B2, ভিটামিন B3, ক্যালসিয়াম, পাচক এনজাইম, ৫.২৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৮ মাইক্রোগ্রাম, লৌহ, কার্বো-হাইড্রেট, জীবাণুনাশক এবং অম্লনাশক উপাদান। কালোজিরা হরমোন ঠিক রাখে এবং প্রস্রাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রয়েছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড।
কালো জিরার গুণাগুণ :
আমাদের প্রায় জ্বর সর্দি এবং মাথা বেথা হয়ে থাকে। কালো জিরা সর্দি, জ্বর এর খুব ভালো কাজ করে। খুব বেশি শীতের মধ্যে কালো জিরা আর মধু একসাথে খেলে শরীর গরম হয়।
মাথায় যন্ত্রণা : কাঁচা সর্দি হয়ে মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কালোজিরা পুঁটলিতে বেঁধে শুঁকতে হবে। তবে পুঁটলিতে নেয়ার আগে তা রগড়ে নিতে হবে। তাতে গন্ধ বের হয় এবং উপকার হয়। তা ছাড়া সির্কাতে ভিজিয়ে শুঁকলেও মাথাব্যথা সারে।
বিছের হুলের জ্বালা : কালোজিরা বেটে তা লাগিয়ে দিতে হবে।
চুলকানি : কালোজিরা ভাজা তেল গায়ে মাখলে চুলকানিতে উপকার হয়। এতে ১০০ গ্রাম সরষের তেলে ২৫-৩০ গ্রাম কালোজিরা ভেজে সে তেল ছেঁকে নিয়ে ব্যবহার করতে হয়।
দাঁতের ব্যথা : গরম পানিতে কালোজিরা নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথার উপশম হয়।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে কালো জিরা-
গর্ববতী মায়ের বুকে দুধ বৃদ্ধি করে কালো জিরা। রাতে শুয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে দুধ বৃদ্ধি পাবে। এভাবে ১৫-২০ দিন খেলে আল্লাহর রহমতে বুকের দুধের পরিমান বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে কালো জিরার বত্তা করে খেতে পারেন ভাতের সাথে।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করে-
নিয়মিত খালি পেটে কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কালো জিরা রক্তে গ্লোকোজের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন খালি পেটে কালো জিরা খাওয়া ভালো।
অধিক ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে-
অনিয়মিত ঋতুস্রাব এর কারণে অনেক শারীরিক ক্ষতি হয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কালো জিরা খেতে পারেন। এতে শারীরিক অবস্থা ভালো থাকবে।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে-
মানবদেহে কালোজিরা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। তাই প্রতিদিন কালো জিরা বা কালোজিরার তেল খেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ব্যথা নাশক হিসাবে কাজ করে-
ব্যথা কমাতে কালো জিরার তেলের জুড়ি নেই। যেকোনো ধরণের ব্যথা কালো জিরার তেলে প্রশমিত হয়। কষলো জিয়ার তেল বাথের ব্যাথায় ভালো কাজ করে। মালিশ করার আগে তেল হালকা গরম করে নিতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে-
মানবদেহের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে কালো জিরাতে থাকা কেরাটিন। কালো জিরাতে প্রায় ১০০ টি রোগের প্রতিষেধক থাকে। তার মধ্যে ক্যান্সার রোগের প্রতিষেধক ও থাকে।
যৌন সমস্যার সমাধান-
প্রতি দিন কালো জিরা আর মধু একসাথে খেলে যৌন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। কালো জিরার তেল যৌন দুর্বলতার জন্য খুব উপকারী। নিয়মিত সেবন করলে চিরস্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়।
চুল পড়া প্রতিরোধ করে-
উপকারি এই কালোজিরা চুল পড়া প্রতিরোধ করে। চুলের জন্য কালো জিরার উপকারিতা অপরিসীম। কালোজিরা চুলের গুঁড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দেয় ফলে চুল শক্ত হয়।
নিয়মিত অলিভ অয়েল আর কালোজিরার তেল সেবন করলে চুল পড়া কমবে। এবং চুলের গুঁড়া শক্ত হবে।