অনেকেই মনে করেন দামি ও বিদেশী ফলের পুষ্টিগুণ বেশি। তাই রোগবালাই হলে আঙুর, আপেল, মাল্টার মতো বিদেশি ফল কেনা হয়। এমন ধারণা অযৌক্তিক। কিছু দেশি ফল আছে, যেগুলোর পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি। দামও অনেক কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দেশি ফলের জোড়া নেই। বিশেষ করে শিশুদের দেশি ফল খেতে উৎসাহিত করতে হবে। এখন জেনে নিতে হবে যে কোনো দেশি ফলের পুষ্টিগুণ-
আম:
আম স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয় একটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে মে মাস থেকে পাকা আম আসতে শুরু করে। জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত দেশি আম পাওয়া যায়।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, আম আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে খুবই কার্যকর। আম রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ক্যান্সার কোষ মেরে সাহায্য করে। আমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা শরীরকে জীবাণু থেকে রক্ষা করে। আমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। চোখের চারপাশের শুষ্কতাও দূর করে। পাকা আমে পাকা আমের চেয়ে বেশি চিনি থাকে। কাঁচা আম শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম খাওয়া উপকারী। এটি পিত্ত অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়ায়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া পরিষ্কার করে। শরীরে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
আম খনিজ আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ। এছাড়া খনিজ লবণ, ভিটামিন বি, ই, সেলেনিয়াম, এনজাইম, ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। এতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ রাখে।
রুক্ষ ত্বক, চুল পড়া, চোখের রোগ, হজমের সমস্যা দূর করতে আম কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া এই ফলটি টনিক, সুস্বাদু এবং লিভারের জন্য উপকারী।
কাঁঠাল:
বাংলাদেশের এই জাতীয় ফলের প্রতিটি অংশ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, কাঁঠালে প্রচুর শক্তি রয়েছে। কাঁঠালে চিনির পরিমাণ বেশি। কাঁঠাল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। পাকা কাঁঠালের ক্যালোরি প্রতি ১০০ গ্রাম প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি এবং খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯ গ্রাম। কাঁচা কাঁঠালের আঁশের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তাই কাঁচা কাঁঠাল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই।
এতে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নিয়াসিন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কাঁঠাল মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, শর্করা এবং ভিটামিন রয়েছে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যা দাদ প্রতিরোধ করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ থেকেও মুক্তি দেয়। কাঁঠাল সর্বত্র পাওয়া গেলেও আশুলিয়ায় বেশি উৎপাদিত হয়।
লিচু:
এটি একটি স্বল্পমেয়াদী গ্রীষ্মকালীন ফল। এই ফল টিউমার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এই রসালো ফলের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন-সি।
অ্যানোরেক্সিয়া এবং বমি বমি ভাব সারাতে জামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন জাম শরীরে রক্ত তৈরি করে। এ ধরনের কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য না থাকলেও জামে রয়েছে খাদ্যশক্তি, শর্করা, চর্বি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-সি এবং ক্যারোটিন।
এটি শরীরের হাড় মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার সারাতে সাহায্য করে। জাম ত্বকের টনিক, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী এবং ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেল এবং রেডিয়েশনের ক্রিয়াকে বাধা দেয়।
জ্যাম:
অ্যানোরেক্সিয়া এবং বমি বমি ভাব সারাতে জামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন জাম শরীরে রক্ত তৈরি করে। এ ধরনের কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য না থাকলেও জামে রয়েছে খাদ্যশক্তি, শর্করা, চর্বি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-সি এবং ক্যারোটিন।
এটি শরীরের হাড় মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার সারাতে সাহায্য করে। জাম ত্বকের টনিক, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী এবং ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেল এবং রেডিয়েশনের ক্রিয়াকে বাধা দেয়।
পেয়ারা:
বাংলাদেশে এখন সারা বছরই পেয়ারা পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৫১ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি, ১১.২০ গ্রাম চিনি, ০.৯০ গ্রাম চর্বি, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি এবং ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে। পেয়ারা কারো কারো জন্য অম্বল হতে পারে, এই ফলটি
বেশিরভাগ মানুষের জন্য উপকারী।
সফেদা:
সাফাদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ, যা শরীরে শক্তি জোগায়। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন, যা হাড় ও দাঁতকে সুস্থ রাখে। সফেদা মানসিক চাপ, অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। ফলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি এবং ই এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কপার এবং আয়রন সহ অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
তরমুজ:
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমায়। এছাড়া এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পানি, তাই গরম আবহাওয়ায় শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে তরমুজ ভূমিকা রাখে। শরীরকে করে সুস্থ ও সতেজ। এতে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমড়া:
প্রতি ১০০ গ্রাম ভোজ্য আমড়ায় রয়েছে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি, ১৫ গ্রাম চিনি, ১.১০ গ্রাম চর্বি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন এবং ৮৩ গ্রাম পানি। এছাড়া আমড়া পিত্ত ও কফ দমনকারী, রুচিবর্ধক হিসেবে বেশ উপকারী। আমড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
জামরুল:
এই ফলটিতে রয়েছে ক্যারোটিন ও ভিটামিন-বি। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য জামরুল একটি উপকারী ফল।
বেল:
পেটের বিভিন্ন রোগ, আমাশয়, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেল একটি উপকারী ফল। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম রয়েছে।