ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের ট্যাক্সের টাকা উধাও

ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের ট্যাক্সের টাকা উধাও
ছবি: প্রতিনিধি

নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির আখড়া সিরাজগঞ্জের বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদ। সরকারী নানা বরাদ্দ নিতে জনগণকে গুণতে হয় নগদ টাকা। আর জনপ্রতিনিধিদের চাহিদামত টাকা দিতে না পারলে মেলেনা কিছুই। একই সাথে জন্ম-মৃত্যু সনদ সহ যে কোন কাগজ তুলতেই দিতে সরকারী ফির বেশী টাকা দিতে হয় অভিযোগ স্থানীয়দের। আর সবশেষ অভিযোগ উঠেছে, সিরাজগঞ্জের বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ট্যাক্সের টাকা সংগ্রহ হলেও তার হদিস মিলছেনা ব্যাংক হিসেবে। ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, টাকা উত্তোলন হয়েছে ঠিকই তবে তা এখনো ব্যাংক হিসেবে জমা হয়নি। প্রয়োজনে তিনি তা জমা করে দেবেন।আর ইউপি সচিব বলছেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ২৭.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে কৃষি প্রধান এলাকা বাগবাটি ইউনিয়নে ৬০ হাজার মানুষের বাস। কৃষি প্রধান এলাকা হবার কারনে এই অঞ্চলের মানুষ সহজ সরল। তাদের এই সরলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধূ জনপ্রতিনিধিরা সরকারী সহায়তা পাইয়ে দেবার কথা বলে বাড়তি টাকা দাবী করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আবার জন্ম-মুত্যু সনদ তুলতেও গুণতে হয় বাড়তি টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তি খাতুন জানান, তার সন্তানদের স্কুলে ভর্তির জন্য জন্মসনদ তুলতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে, তাকে জানানো বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ না করলে জন্মসনদ মিলবেনা। তাই তিনি ট্যাক্স দেবার সময় থাকার পরও তড়িঘড়ি করে বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ করেন। তবে তা গত বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। একই সাথে জন্মসনদ তুলতেও সরকারী ফির বাইরে গুণতে হয়েছে বাড়তি টাকা। আর জন্মসনদ মিলেছে দীর্ঘ সময় পর। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ পূর্বে ট্যাক্সের পরিমান কম থাকলেও গত অর্থবছর থেকে ট্যাক্স বেড়েছে কয়েকগুণ। স্থানীয়ভাবে মাইকিং করে জনগনকে এক প্রকার জোর করেই ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। আবার হোল্ডিং প্লেট দেবার কথা বলেও নিয়েছে বাড়তি আরো টাকা। তবে অধিকাংশ বাড়িতে এখনো পৌছেনি হোল্ডিং প্লেট। কিন্তু সে টাকা কোথায় জমা হয়েছে জানেন না কেউ। এখনো ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ হোল্ডিং নম্বর প্লেট এখনো পায়নি বলে জানায়।

বাগবাটি ইউপির সচিব মো: মাসুদ রানা জানান, সরকারী ফির বাইরে কোন অনৈতিক সুবিধা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি আরো জানান, গত বছরের নভেম্বরে তিনি এই ইউনিয়ন পরিষদে যোগ দিয়েছেন। তাই ট্যাক্সের টাকার হিসাব তিনি জানেন না। তবে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের যে কোন আয় পরিষদের ব্যাংক হিসেবে জমা দিতে হবে। আর তা খরচ করতেও পরিষদের সদস্যদের অনুমোদন নিয়ে খরচ করতে হবে। তবে ট্যাক্সের টাকা যদি হিসাব নম্বরে জমা না হয়ে থাকে তবে তা চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।

ইউনিয়ন পরিষদের নথি থেকে জানা যায়, ট্যাক্স সহ অন্যান্য খাতে সংগ্রহ ১৬লাখ ৮৮ হাজার ৬শত ২২ টাকা হলেও পরিষদের ব্যাংক হিসেবে মেলে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫শ ২৮ টাকা। তবে সঠিক সময়ে টাকা জমা না দেয়াটা অন্যায় নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গির আলম জানান, ট্যাক্স সহ অন্যান্য জমা দেয়া ও খরচ করার চেয়ারম্যানের নিজস্ব এখতিয়ার। তবে ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের টাকা অবশ্যই ব্যাংক হিসেবে জমা করে তারপর খরচের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে।

গত ১৫ বছর ধরে চেয়ারম্যান থাকার কারনে নানা অনিয়ম করলেও এবারই চেয়ারম্যানের অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে স্থানীয় মানুষ। আর স্থানীয় মানুষেরা জানান, অনিয়মের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিছু অসাধূ ইউপি সদস্যরাও যুক্ত। ট্যাক্সের সংগ্রহ করলেও নেই কোন রেজিষ্টার। তাই সরকারী অর্থ লোপাট সহ পরিষদের টাকার হদিস না থাকার কারনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের ট্যাক্সের টাকা উধাও

ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের ট্যাক্সের টাকা উধাও
ছবি: প্রতিনিধি

নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির আখড়া সিরাজগঞ্জের বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদ। সরকারী নানা বরাদ্দ নিতে জনগণকে গুণতে হয় নগদ টাকা। আর জনপ্রতিনিধিদের চাহিদামত টাকা দিতে না পারলে মেলেনা কিছুই। একই সাথে জন্ম-মৃত্যু সনদ সহ যে কোন কাগজ তুলতেই দিতে সরকারী ফির বেশী টাকা দিতে হয় অভিযোগ স্থানীয়দের। আর সবশেষ অভিযোগ উঠেছে, সিরাজগঞ্জের বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ট্যাক্সের টাকা সংগ্রহ হলেও তার হদিস মিলছেনা ব্যাংক হিসেবে। ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, টাকা উত্তোলন হয়েছে ঠিকই তবে তা এখনো ব্যাংক হিসেবে জমা হয়নি। প্রয়োজনে তিনি তা জমা করে দেবেন।আর ইউপি সচিব বলছেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ২৭.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে কৃষি প্রধান এলাকা বাগবাটি ইউনিয়নে ৬০ হাজার মানুষের বাস। কৃষি প্রধান এলাকা হবার কারনে এই অঞ্চলের মানুষ সহজ সরল। তাদের এই সরলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধূ জনপ্রতিনিধিরা সরকারী সহায়তা পাইয়ে দেবার কথা বলে বাড়তি টাকা দাবী করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আবার জন্ম-মুত্যু সনদ তুলতেও গুণতে হয় বাড়তি টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তি খাতুন জানান, তার সন্তানদের স্কুলে ভর্তির জন্য জন্মসনদ তুলতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে, তাকে জানানো বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ না করলে জন্মসনদ মিলবেনা। তাই তিনি ট্যাক্স দেবার সময় থাকার পরও তড়িঘড়ি করে বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ করেন। তবে তা গত বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। একই সাথে জন্মসনদ তুলতেও সরকারী ফির বাইরে গুণতে হয়েছে বাড়তি টাকা। আর জন্মসনদ মিলেছে দীর্ঘ সময় পর। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ পূর্বে ট্যাক্সের পরিমান কম থাকলেও গত অর্থবছর থেকে ট্যাক্স বেড়েছে কয়েকগুণ। স্থানীয়ভাবে মাইকিং করে জনগনকে এক প্রকার জোর করেই ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। আবার হোল্ডিং প্লেট দেবার কথা বলেও নিয়েছে বাড়তি আরো টাকা। তবে অধিকাংশ বাড়িতে এখনো পৌছেনি হোল্ডিং প্লেট। কিন্তু সে টাকা কোথায় জমা হয়েছে জানেন না কেউ। এখনো ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ হোল্ডিং নম্বর প্লেট এখনো পায়নি বলে জানায়।

বাগবাটি ইউপির সচিব মো: মাসুদ রানা জানান, সরকারী ফির বাইরে কোন অনৈতিক সুবিধা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি আরো জানান, গত বছরের নভেম্বরে তিনি এই ইউনিয়ন পরিষদে যোগ দিয়েছেন। তাই ট্যাক্সের টাকার হিসাব তিনি জানেন না। তবে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের যে কোন আয় পরিষদের ব্যাংক হিসেবে জমা দিতে হবে। আর তা খরচ করতেও পরিষদের সদস্যদের অনুমোদন নিয়ে খরচ করতে হবে। তবে ট্যাক্সের টাকা যদি হিসাব নম্বরে জমা না হয়ে থাকে তবে তা চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।

ইউনিয়ন পরিষদের নথি থেকে জানা যায়, ট্যাক্স সহ অন্যান্য খাতে সংগ্রহ ১৬লাখ ৮৮ হাজার ৬শত ২২ টাকা হলেও পরিষদের ব্যাংক হিসেবে মেলে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫শ ২৮ টাকা। তবে সঠিক সময়ে টাকা জমা না দেয়াটা অন্যায় নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গির আলম জানান, ট্যাক্স সহ অন্যান্য জমা দেয়া ও খরচ করার চেয়ারম্যানের নিজস্ব এখতিয়ার। তবে ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের টাকা অবশ্যই ব্যাংক হিসেবে জমা করে তারপর খরচের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে।

গত ১৫ বছর ধরে চেয়ারম্যান থাকার কারনে নানা অনিয়ম করলেও এবারই চেয়ারম্যানের অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে স্থানীয় মানুষ। আর স্থানীয় মানুষেরা জানান, অনিয়মের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিছু অসাধূ ইউপি সদস্যরাও যুক্ত। ট্যাক্সের সংগ্রহ করলেও নেই কোন রেজিষ্টার। তাই সরকারী অর্থ লোপাট সহ পরিষদের টাকার হদিস না থাকার কারনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত