অপরিকল্পিত নগরায়ন হওয়ায় ঢাকা বসবাসের উপযোগীতা হারাতে বসেছে। নগরীকে বসবাসের উপযোগী এবং নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে যত্রতত্র পার্কিং এবং বাজার সরাতে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটি করপোরেশন। যদিও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান কারওয়ান বাজার স্থানাস্তর প্রক্রিয়া দুই যুগেরও বেশি সময়ে শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। ঢাকার জ্যাম জট ছাড়াও জনভোগান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় এ খোলা বাজারটিকে।
সিটি করপোরেশন কারওয়ান বাজারের মত নগরীর বুকে জেঁকে থাকা খোলা বাজারগুলো স্থানাস্তরে তোড়জোড় দিলেও ব্যবসায়ীরা নতুন বাজারে যেতে নারাজ। তারা বলছেন, নতুন স্থানে ব্যবসা দাঁড় করানো নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। স্থান-কাল বিবেচনায় প্রয়োজনে বহুতল ভবন করে হলেও বাজার রাখার তাগিদ তাদরে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন বলছে- অচিরেই স্থানাস্তর হতে হবে নির্ধারিত স্থানে।
দীর্ঘ সময় ধরে গিঞ্জি পরিবেশে গড়ে ওঠা কারওয়ান বাজার স্থানাস্তরে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ধীরগতি, এবং ব্যবসায়ীদেরে সরে না যাওয়ার কারণ খুঁজেছে ঢাকা মেইল। নগরবাসী বলছেন, উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে আজও বাজার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন হয়নি। যা এখন সময়ের দাবি। নগরবিদরা বলছেন, ব্যবসা স্থানান্তরে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে। না হলে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হবে সবাই। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ পাস করে ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজারের যানজট কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে এই তিনটি পাইকারি কাচাবাজার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। তিন দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। এর পর আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তাও আলোর মুখ দেখেনি। ২০২৩ সালের নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কারওয়ান বাজার এলাকা সম্পূর্ণ খালি করতে চায়।
কারওয়ান বাজারে প্রায় ২৪ বিঘা জমির ওপরে ডিএনসিসির মালিকানাধীন তিনটি মার্কেট রয়েছে। কারওয়ান বাজারের দোকানগুলো আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ী ও মহাখালী স্থানান্তরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মার্কেট সমিতির নেতাদের সঙ্গে ডিএনসিসির আলাপ-আলোচনা চলছে।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজধানীর তিনটি পাইকারি কাঁচা বাজার নির্মাণ প্রকল্পের সারসংক্ষেপ থেকে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘ঢাকা শহরে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শুরুতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২০৬.৪৬ কোটি টাকা ধরা হলেও এখন তা বেড়ে ৩৫০.০০ টাকা ধরা হয়েছে। প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়- কারওয়ান বাজারস্থ দোকানগুসমূহ ঢাকা শহরের আমিনবার, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় নির্মাণাধীন স্থানান্তর করা হবে। যেখানে আনুমানিক নির্মিত দোকান মহাখালী ১ হাজার ১৬৫, আমিনবাজার ৬৯৭ এবং যাত্রবাড়ীতে স্থানান্তির হবে ৯১২টি।
এছাড়াও কারওয়ান বাজার থেকে স্থানান্তরযোগ্য দোকান মোট ১ হাজার ৮০৮টি। যেখানে মাহখালী ৩৬০, আমিনবাজার ৫৫৯, এবং যাত্রাবাড়ী যাবে ৮৯৫টি।প্রকল্প বাস্তবায়নে সবশেষ তথ্য মতে, এরই মধ্যে আমিনবাজার ও মহাখালীতে মার্কেট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে একটি ব্লকের কেবলমাত্র একটি ছাদ নির্মাণ কাজ বাকি রয়েছে। মাঝে প্রকল্পের মেয়াদ না থাকায় অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না। নতুন করে সময় বাড়ানোয় কাজে গতি এসেছে।মহাখালী পাইকারি কাঁচা বাজারের মোট জমির পরিমাণ ৭.১৭ একর। এখান সাতটি ফ্লোরে একটি বেজমেন্ট ও ছয়টি ফ্লোর রয়েছে। মোট দোকান সংখ্যা ১ হাজার ১৬৫টি। এর মধ্যে কারওয়ান বাজার থেকে স্থানাস্তরিত হবে ৩৬০ টি দোকান।এ ছাড়াও যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচা বাজারের মোট জমির পরিমাণ ৫.২১ একর। যেখানে একটি বেজমেন্ট সহ রয়েছে চারটি ফ্লোর। কারওয়ান বাজার থেকে স্থানান্তরিত হবে ৮৯৫ টি দোকান।কারওয়ান বাজারের আড়ৎ মালিকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, যাত্রাবাড়ীতে নির্মিত নতুন মার্কেটে আড়ৎগুলো যথাযথ নয়।
তারা বলছেন, যাত্রাবাড়ীর নতুন মার্কেটের দোকানগুলো সংস্কার করে বড় আকারে আড়তের উপযোগী করতে হবে। অন্যথায় কারওয়ান বাজার এলাকায় দু-তিন একর জায়গার ওপর একটি আধুনিক বহুতল মার্কেট নির্মাণ করতে হবে এবং ১ ও ২ নম্বর সুপার মার্কেট ও কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ওই মার্কেটে স্থানান্তর করা হবে।শ্যামবাজার ঢাকার অন্যতম পুরাতন বাজার। এটা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ঢাকাবাসীর বিভিন্ন দ্রব্যের যোগান দিয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্ববধানে বাজারটি পরিচালিত হচ্ছে। এই বাজারে সাধারণত ফজর নামাযের পর থেকে সকাল ১১.০০ টা পর্যন্ত বেশী ভিড় হয়। কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই এবং প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন হয়ে থাকে।