ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগে নিহত নারীর স্বামী আলী হোসেনকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আলী হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আলী হোসেন আগেও একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পাঁচ বছর কারাভোগের পর ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর ২০১৯ সালে আপন মামাতো বোন আমেনা খাতুনকে বিয়ে করেন। এর মধ্যে তাদের দাম্পত্য জীবনে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আনাছ নামে দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে আলী হোসেন এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ঋণ নেন। সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করতেন এনজিওকর্মীরা। প্রায়ই হোসেনের স্ত্রী ও দুই ছেলে না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পেতে ২-৩ মাস আগে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। ১৬ মে রাতে স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর একই কায়দায় ঘুমন্ত দুই সন্তানকেও তিনি হত্যা করেন। এরপর বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় তিনি। ১৭ মে সকালে জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন আলী হোসেন।
২১ মে দুপুরে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া গ্রামের চাষের জমি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু মরদেহগুলো অর্ধগলিত হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মরদেহের সঙ্গের কাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন নিহত আমেনার মা হাসিনা খাতুন। ২২ মে তিনি বাদী হয়ে আলী হোসনসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
বুধবার বিকেলে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর এলাকা থেকে আলীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) মোহাইমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফাল্গুনী নন্দী, সহকারী পুলিশ সুপার তাহমিনা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক হোসেনসহ এই গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবি পুলিশের সদস্যরা।